ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সমৃদ্ধ কৃষিতে নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:০০ এএম  (ভিজিট : ৩৪৪)
স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। এতে খাদ্যশস্য (ধান, গম, ভুট্টা) উৎপাদন হয় ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার টন। যা দিয়ে তখন সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুখের আহার জোটানো যেত না। আর বর্তমানে কৃষিজমি কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টরে। অথচ এই জমিতেই এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৪ কোটি টনেরও বেশি। অল্প জমিতে বেশি শস্য উৎপাদন করে এখন দেশের ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, জমিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভিন্ন স্বাদের খাদ্যেরও যোগান দেওয়া হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে কৃষিজমি কমে যাওয়া, অন্যদিকে দেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে মূলত কৃষিতে অকল্পনীয় উন্নতি সাধনের মাধ্যমে। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের নিত্যনতুন গবেষণা, নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের উদ্ভাবন, উন্নত মানের বীজ আমদানি, ভর্তুকি মূল্যে সার-সেচের নিশ্চয়তা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, কৃষি যন্ত্রের আধুনিকায়ন এবং কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকি প্রদান-এসব কারণেই প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ কৃষিজমি কমে গেলেও খাদ্যশস্য উৎপাদন তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কৃষি খাতে যে বিপ্লব ঘটেছে তার মূল কারিগর দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা। সে সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং ভর্তুকি প্রদানসহ সার-বীজ-কীটনাশকের প্রাপ্ততা নিশ্চিত করাও বড় ভূমিকা রেখেছে। এ মন্তব্য করে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী সময়ের আলোকে বলেন, ‘দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বড় অবদান কৃষির। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাদ্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে। তবে কৃষির এই সাফল্য অল্প কয়েক বছর বা এক-দুই দশকের মধ্যে আসেনি। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে কৃষির উন্নতি ঘটেছে। একদিকে শিল্পায়নের কারণে কমেছে কৃষিজমি, অন্যদিকে বেড়েছে দেশের জনসংখ্যা। ফলে খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এই চাহিদা পূরণের তাগিদ থেকেই দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা কৃষি খাতে নিত্যনতুন উচ্চ ফলনশীল শস্য জাতের উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন। তারাই দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে কৃষি যন্ত্রের আধুনিকায়ন, সার-বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ও সরকারের সব ধরনের সহযোগিতাও কৃষির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে। তবে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো কৃষির সব ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন করেছে আমরা এখনও তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। ওইসব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিতে পারলে দেশে কৃষিকে আরও অনেক এগিয়ে নেওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করে কৃষিপণ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি বাড়িয়ে বেশি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।’

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের অর্থনীতি এখনও অধিকাংশই কৃষিনির্ভর। মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জাতিসংঘ প্রণীত এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা অন্যতম। দেশে ক্রমাগত কৃষিজমি হ্রাস পেলেও সবশেষ গত তিন দশকে ধান, আলু, ফল, সবজি ও ভুট্টার উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিকে আধুনিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ, নিরাপদ ফসল উৎপাদন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও এলাকা বিশেষ আবহাওয়ার প্রতিকূলতা মোকাবিলায় টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করেছে।

খাদ্যনিরাপত্তায় কৃষি : দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় অবদান কৃষি ও কৃষকের। কৃষি খাতের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও সহযোগিতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ, গম দ্বিগুণ, ভুট্টা দশগুণ ও সবজির উৎপাদন পাঁচগুণ। খাদ্যশস্য, মাছ, ডিম ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১৩টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান জানা গেছে। এর মাঝে ১০টিই কৃষি খাত। এখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয়, ইলিশে প্রথম, সবজিতে তৃতীয়, আলুতে ষষ্ঠ, কাঁঠালে দ্বিতীয়, আমে অষ্টম, পেয়ারায় অষ্টম, ছাগলের দুধে দ্বিতীয় এবং মিঠাপানির মাছে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

জানা যায়, বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের স্থান হলো সবার ওপরে। আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আলু রফতানি হয় বিদেশে। মাছ রফতানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কৃষির এ সার্বিক কর্মযজ্ঞের পেছনে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন কৃষিবিদরা। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে দেশ আজ খাদ্য উৎপাদনের বিভিন্ন সূচকে বিশ্বের জন্য পথিকৃৎ। এসব সম্ভব হয়েছে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণা আর কৃষকদের পরিশ্রমের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এখন পর্যন্ত ১১১টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের মোট ১১৯টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে এবং দেশের কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলছে। এ ছাড়া উদ্ভাবন করেছে শিম, ডাল ও তেলজাতীয় আটটি ফসলের জন্য জীবাণু সার, যা মাটির গুণাগুণ রক্ষাসহ ডাল ও তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের জলবায়ু ও কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ৬২৬টি ফসল উৎপাদনের প্রযুক্তিসহ মোট ১ হাজার ২৫১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

বাংলাদেশের গবেষকরা বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এতগুলো প্রতিকূল পরিবেশ সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ দেশ। বর্তমান সময়ে কৃষি প্রযুক্তির প্রসারে যুক্ত হয়েছে ই-কৃষি। কৃষি সমস্যার সমাধানে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে বাড়ি থেকে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন গ্রামের কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে স্থাপিত ‘কল সেন্টার’ থেকে টেলিফোনে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য বিপণনে ই-কমার্স উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কুরবানির পশু, শাকসবজি ও ফলমূলও বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে এখন সারা বছর বাজারে সবজি পাওয়া যায়, যা কয়েক বছর আগেও ছিল অবাস্তব। এখন গ্রীষ্মকালীন শিম, গ্রীষ্মকালীন টমেটোসহ আরও অন্যান্য সবজি উৎপাদনে ব্যাপকভাবে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এতে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। লবণাক্ততাসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও বিশেষ ভিটামিনসমৃদ্ধ আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত কৃষিবিদদের অবদান। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লাভজনক বিদেশি ফসলকে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই করে চাষাবাদ উপযোগী করতে ফসল অভিযোজন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি গবেষকরা। তাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং নিত্যনতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের শস্য উৎপাদনের মাধ্যমেই জমি কমলেও কৃষির মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে।

বেড়েছে প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন : কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শুধু ধান চাষের জমিই কমেছে ২৫ শতাংশের মতো। তবুও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে ধান-চালের উৎপাদন বাড়ানো গেছে কয়েকগুণ। বিগত কয়েক বছরের চাল উপাদনের চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৩২ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চালের উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৭৩ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮১ লাখ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চালের উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৯১ লাখ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৯২ লাখ টন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু দৈনিক চাল গ্রহণের পরিমাণ ৩২৮ দশমিক ৯ গ্রাম। শহরাঞ্চলে মাথাপিছু চাল গ্রহণের পরিমাণ ২৮৪ দশমিক ৭ গ্রাম, যা জাতীয় গড় থেকে ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ১৭ কোটির মানুষের প্রতিদিনের হিসাব ধরে বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টন চাল। এর বাইরে বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড ও বীজসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ধান-চাল ব্যবহার হয় ১ কোটি টন। সব মিলিয়ে প্রয়োজন ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও দেশে এখন চাল উৎপাদন হয় বেশি, কিন্তু নষ্ট ও অপচয়ের কারণে বছরে ৭ থেকে ৮ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়।

বৃহৎ অর্থে কৃষিতে শস্য, প্রাণিসম্পদ (গবাদিপশু, মৎস্য ও পোল্ট্রি) এবং বন খাত অন্তর্ভুক্ত। শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান-চাল ছাড়াও পাট, গম, শাকসবজি, আখ, ডাল ফসল ইত্যাদি। প্রাণিসম্পদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত গবাদিপশু, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, হাঁস-মুরগি ও মৎস্য। কৃষির এসব খাতের মাধ্যমেও দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৃষিবিদ বশিরুল ইসলাম বলেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিবিদ বা কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদান অনেক। কৃষিবিদদের হাতেই সৃষ্টি হয় ফসলের নতুন জাত কিংবা ফসলের উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ফসল কেন, ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর উন্নয়ন, দুধের মান ও পরিমাণ বাড়ানো, মাংসের জন্য উন্নতজাতের পশু পালন প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মাছের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি খামারের বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিকীকরণ, কিংবা কৃষির সব ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-এ সবই কৃষিবিদদের হাতের স্পর্শে প্রাণ পায়। উজ্জীবিত হন সংশ্লিষ্ট সবাই। এভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের কৃষি এবং নিশ্চিত করা গেছে দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা।

খাদ্যনিরাপত্তায় কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাত : কৃষির মতোই কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতও এখন দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতের মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প অন্যতম প্রধান এবং সম্ভাবনাময় খাত। যা কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজন ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প দেশের প্রস্তুতকৃত খাদ্য উৎপাদনের প্রায় ২২ ভাগের চেয়ে বেশি। কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান জিডিপিতে এখন ৭.৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে এক হাজারের মতো কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনা রয়েছে যার মধ্যে ২৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান রফতানিকারক এবং ২৩৫টি অভ্যন্তরীণ বাজার পূরণ করে থাকে। এই শিল্পে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে, তেমনই নানা পদের ও নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব খাদ্য পণ্যও দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখছে এখন।

বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, দেশের কৃষি খাত থেকে আমরা দুই ধরনের খাদ্য পাই। এর একটি হচ্ছে বেসিক ফুড-যেটা হচ্ছে, ভাত-রুটি। আরেক প্রকার হচ্ছে প্রক্রিয়াকরণ ফুড। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয় বলতে মূলত ভাত-রুটির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাকে বোঝায়। তবে বর্তমানে প্রক্রিয়াকরণ ফুডও দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমরা কৃষিপণ্য নিয়ে সারা বছর প্রসেস করে ভোক্তার হাতে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা বিশ্বের ১৪৫টি দেশে রফতানিও করছি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্য। সরকারের কাছ থেকে যদি আমরা আরও পলিসি সাপোর্ট পাই, প্রণোদনা পাই এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে পারলে দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করতে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাত আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close