ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর খননের হিড়িক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:২৬ এএম  (ভিজিট : ৪১৩৪)
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গণহারে চলছে পুকুর খনন। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পরিসরে পুকুর খননের কারণে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে পুুকুর খনন করায় ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। শুধূ তাই নয়, আঞ্চলিক ও মহাসড়ক দিয়ে পুকুর খননের কাদামাটি বহন করায় সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনকি কর্দমাক্ত পিচ্ছিল সড়কে দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানিও ঘটছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুকুর খননের হিড়িক পড়লেও দেখার যেন কেউ নেই।    

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছু কিছু পুকুর কাটার অনুমতি মৌখিকভাবে উপজেলা থেকে দেওয়া হয়।

গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জুবায়ের আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রশাসন যখন কোনো পুকুর কাটা বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তখন থানা থেকে ফোর্স নিয়ে গিয়ে পুকুর কাটা বন্ধ করা হয়। তবে এখন থানার বাইরে পুলিশ খুব কম যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। কোনো কথা থাকলে হোয়াটসঅ্যাপে লিখে দেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর যাবৎ ফসলি জমিতে পুকুর কাটার ফলে গোমস্তাপুর উপজেলার বিশুক্ষেত্র, রাঙামাটি, বোয়ালিয়া, রাধানগর ও পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন নিচু এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। খাল, ব্রিজ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলায় দেখা দিচ্ছে এই জলাবদ্ধতা। চলতি বছর এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন চলমান রয়েছে। আগেও এ উপজেলায় ভূমি নীতিমালা উপেক্ষা করে শত শত পুকুর খনন করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলার চৌডালা ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নে বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী উপজেলা প্রশাসনের চাপে পুকুর কাটা সাময়িক বন্ধ রাখলেও আবার মহা ধুমধামের সঙ্গে ফসলি জমিতে শুরু করে পুকুর খনন। গোমস্তাপুর উপজেলার সর্বত্রই এখন দিন-রাত অবাধে কৃষি আবাদযোগ্য ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে।  

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের আবাদি জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। যেখানে কৃষকরা ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার লাভ করে থাকেন। সেখানে পুকুর কাটলে প্রতি বিঘায় বছরে ১৫-২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তাই বেশি মুনাফার লোভে কৃষকরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পুকুর খনন করছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, টাকার বিনিময়ে ১০ দিন, ১৫ দিন আবার ২০ দিন পুকুর কাটার লিখিত ও মৌখিক অনুমোদন নিয়ে দেদার পুকুর কাটছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কখনো ১০ হাজার, কখনো ২০ হাজার আবার কখনো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কিছুদিন পর পুনরায় পুকুর কাটার অনুমতি মেলে। গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিসের এক গাড়িচালকের বিরুদ্ধে এসব টাকা লেনদেন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলেও আমরা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন দফতরে টাকা দিই। তাই পুকুর খননে কোনো সমস্যা হয় না। গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভের সাথে বলেন, তারা আমার কাছে টাকা দাবি করেছিল। না দেওয়ায় আমাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। অথচ প্রতিদিন কী করে অসংখ্য পুকুর প্রকাশ্যে খনন করছে তা উপজেলা প্রশাসনই বলতে পারবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close