ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

দাফনের তিন বছর ৮ মাস পর কবর থেকে ব্যবসায়ীর মরদেহ উত্তোলন
প্রকাশ: সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৬ পিএম  (ভিজিট : ১৫২)
বরিশালের বানারীপাড়ায় আদালতের নির্দেশে তিন বছর ৮ মাস পরে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য কবর খুঁড়ে আব্দুস সালাম গোলন্দাজ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের গোলন্দাজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার লাশ (মাথার খুলি, বুক, হাত ও পায়ের হাড়গোড়) উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। 

কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের সময় বানারীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র, হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মৃত আব্দুস সালাম গোলন্দাজের বোন ও মামলার বাদী নাসিমা ইয়াসমিন, ভাই আলাউদ্দিন গোলন্দাজ, ছেলে সাব্বির ও মেয়ে সামিয়া আক্তার মিমসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে মৃত্যুর তিন বছর ৮ মাস পরে কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে সেখানে সাংবাদিক ও প্রতিবেশীসহ উৎসুক জনতা ভিড় করেন। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডোম দিলীপ তার সহকারীসহ লোকজন নিয়ে এ লাশ উত্তোলন করেন। 

মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পরে ব্যবসায়ী আ. সালাম গোলন্দাজকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী ও জামাতাসহ চারজনকে আসামি করে তার বোন নাসিমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১২ জুন মামলাটি বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। 

মামলার আসামিরা হলেন- মৃত ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০), তার মেয়ে জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ (৩৮), মো. মাসুম (৩৮) ও স্ত্রীর ভাই দুলাল হাওলাদার (৫৩)। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদীর বড় ভাই সালাম গোলন্দাজের সঙ্গে ১নং আসামি সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ের পর তার গর্ভে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানার সঙ্গে ২নং আসামি খালিদ মাহমুদ সোহাগের বিবাহ হয় এবং এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিথিলা ফারজানা তার মা ও স্বামীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং স্বামী সোহাগকে তালাক দেয়। ব্যাপারটি সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী আব্দুস সালাম গোলন্দাজ জেনে ফেলায় স্ত্রীকে এ অনৈতিক পথ থেকে ফেরানোর জন্য শাসন করাসহ বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ দেন। স্বামীর অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জামাতার সঙ্গে নির্বিঘ্নে পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে সাবিনা ইয়াসমিন তাকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আসামি সাবিনা ইয়াসমিন অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতিমূলক দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বানারীপাড়ার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারকে কমিশনে বাসায় নিয়ে অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে দাতা দেখিয়ে এবং তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গ্রহীতা হয়ে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর ৬ একর জমির হেবা দলিল সৃষ্টি করেন যার নম্বর-১৮১৭। 

পরবর্তীতে অর্থ সম্পত্তি আত্মসাৎ ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ পরকীয়া প্রেমের বাধা দূর করার জন্য অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা হতে পরদিন ৯ জানুয়ারি সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন চেতনা নাশক ঔষধ (বিষ) সেবন করিয়ে এবং এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আসামিরা সকালবেলা প্রচার করেন যে সালাম গোলন্দাজ রাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আসামিরা তখন তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করেন। পরবর্তীতে আসামিদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় সালাম গোলন্দাজকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এ মামলা দায়ের করা হয় উল্লেখ করে বাদী দাবি করেন তার ভাইয়ের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করলে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক শারমিন সুলতানা সুমী ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম গোলন্দাজের প্রকৃত মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তার লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। 

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র বলেন, আদালতের নির্দেশক্রমে কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের সময় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছি। 

এ বিষয়ে হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বানারীপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী সালাম গোলন্দাজের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ বলেন, লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন   মৃত্যুরহস্য উদঘাটন-আদালতের নির্দেশ   বানারীপাড়া-বরিশাল  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close