ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

এক মাসেই দৃশ্যমান সংস্কার
আশা জাগছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে
প্রকাশ: সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:১৫ এএম  (ভিজিট : ৫০৮)
বিদায়ি শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদের কিছু বেশি সময়ে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে একেবারে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এস আলমসহ কয়েকটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকে ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। বীমা খাত, শেয়ারবাজার থেকেও ইচ্ছামতো হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা। প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণের বোঝা রেখে গেছে হাসিনা সরকার। ডলারের বাজার বেসামাল করা হয়েছে, মূল্যস্ফীতিতে তৈরি হয় নতুন রেকর্ড।

রীতিমতো একটা ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তার আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে দেশ ছেড়ে পালান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। নতুন এ সরকারের এক মাস পূর্ণ হয় ৮ সেপ্টেম্বর। এই এক মাসে ড. ইউনূসের সরকার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার করেছে তা খুবই দৃশ্যমান। এতে আশা জাগছে পুরো অর্থনীতিতে।

নতুন এ সরকার গত এক মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করার পাশাপাশি সবার আগে ব্যাংক খাতে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের লুটপাটের সবচেয়ে বড় সহযোগী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদায়ি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারকে বিদায় করে নতুন সরকার। একই সঙ্গে দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত ১৪ আগস্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব নিয়েই তিনি সবার আগে ব্যাংক খাতের মাফিয়া এস আলম গ্রুপের কবল থেকে ৮ ব্যাংককে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন।

পরে একে একে মোট ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ও চেয়ারম্যান পরিবর্তন করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আগের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে বসানো হয় নতুন চেয়ারম্যান। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পদেও অনেক রদবদল করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নতুন গভর্নর ব্যাংক কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে তাদের কবলে থাকা ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘোষণাও দেন ড. আহসান এইচ মনসুর। অপরদিকে নতুন সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়-অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। এর জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়নে কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে পলাতক শেখ হাসিনা সরকার কালো টাকা সাদা করার যে বিধান রাখে, নতুন সরকার সে বিধানও বাতিলের ঘোষণা দেয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে কঠিন পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল এবং এক মাসে যে সব সংস্কারমূলক কাজে হাত দিয়েছে তাতে সরকার সাধুবাদ পেতেই পারে।

এ মন্তব্য করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকার কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে কিছুই ছিল না, আরেক দিকে অর্থনীতি একেবারে ভঙ্গুর। স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে সবার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকটিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে। এরপর নজর দেওয়া হয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দিকে এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর দিকে। এক মাস কিন্তু খুবই অল্প সময়। তবুও এই সময়ে ব্যাংক খাতে একটা আমূল পরিবর্তনের সূচনা করতে পেরেছে নতুন সরকার। অর্থনৈতিক আরও কিছু সংস্কারেও হাত দিয়েছে সরকার। সুতরাং আমি মনে করি এক মাসে সরকার ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে সংস্কার শুরু করেছে সেটি খুবই দৃশ্যমান এবং এতে সরকার সাধুবাদ পেতেই পারে। আমি মনে করি সংস্কারের এই ধারা যদি চলমান রাখতে পারে তাহলে আমরা যে সুন্দর বাংলাদেশের প্রত্যাশায় রয়েছি-সেটি করতে পারবে এই সরকার।’

বেসরকারি ১৫ ব্যাংকে পর্ষদ ও চেয়ারম্যান পরিবর্তন : এই এক মাসে বেসরকারি ১৫ ব্যাংকের মধ্যে অধিকাংশেরই পরিচালন পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। আর কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বদল করা হয়। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের কবলে থাকা ৮ ব্যাংক-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক দখলমুক্ত করা হয়। এসব ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয় এবং চেয়ারম্যানও বদল করা হয়।

এস আলম গ্রুপের বাইরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদ ও চেয়ারম্যানের পরিবর্তন আনা হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান বদল : এই এক মাসের মধ্যেই নতুন সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক-সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বদল করে সরকার। সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ও সরকারের সাবেক সচিব এম ফজলুর রহমানকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদকে। আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা।

ড. দেবপ্রিয়র নেতৃত্বে শ্বেতপত্র কমিটি : গত ২৯ আগস্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে সরকার। কারা, কীভাবে দুর্নীতি করেছে, এ কমিটি তা ধরবে না। তবে গত কয়েক বছরের অর্থনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির সংকট ও চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ করবে এবং সমাধানের পথও বাতলে দেবে তারা। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে বলে কথা রয়েছে। যদি কোনো খাতের প্রতিবেদন আগেই তৈরি হয়ে যায়, তা হলে তা অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

বিএসইসিতে রদবদল : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনে নতুন সরকার। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এর আগে বিএসইসির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া ডিএসই ও সিএসইতেও শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসে এই এক মাসে।


সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close