প্রকাশ: রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৪৫ পিএম (ভিজিট : ২১৮)
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি প্রতি বছর আসে-যায়। কিন্তু গণশিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ঠাকুরগাঁওয়ের মোকছেদ আলীর পরিবারের খোঁজ রাখে না কেউ। মোকছেদ আলীই সেই কুশীলব,যিনি নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁওয়ের কচুঁবাড়ি কৃষ্টপুর গ্রামকে দেশের প্রথম নিরক্ষরমুক্ত গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। অথচ তার একমাত্র স্ত্রীই আজ রয়েছেন অবহেলায়।
জেলা শহর হতে উত্তরে ৭ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত মোকছেদ আলীর গ্রাম। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত বাড়ির উঠানে ভাঙ্গা টিনের ওপর মরিচ শুকানোর কাজ করছেন মোকছেদ আলীর ৭০ বছরের বৃদ্ধা স্ত্রী জাহেদা খাতুন।
জাহেদা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জীবনের দুঃখ দুর্দশা আর নানা চড়াই উৎরাই এর কথা। স্বামীর মৃত্যুর পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই তার। তবে জীবন সায়াহ্নে আর কিছু চান না, শুধু তার স্বামী মোকছেদ আলীর যথার্থ সম্মান দেখে মরতে চান তিনি।
স্বাধীনতা উত্তর (১৯৭২ সাল) বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুঁবাড়ি কৃষ্টপুর গ্রামের কলেজপড়ুয়া ছাত্র মোকছেদ আলী ঝাঁপিয়ে পড়েন গণশিক্ষা আন্দোলনে। তার নিরন্তর চেষ্টায় তার নিজ গ্রামটি দেশের প্রথম শতভাগ নিরক্ষর মুক্ত হয়। গ্রামের সাতশ নারী-পুরুষ সবাই সাক্ষর করতে শিখে যায়। ঘটে যায় এক নীরব বিপ্লব। তার এ কাজে সহযোগিতা করেন ওই গ্রামের মোবারক আলী, আবদুল গফুর সরকার, উমেদা খাতুন, তৈয়বা খাতুনসহ অনেকে।
সেই সময় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে মোকছেদ আলী। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এই কচুঁবাড়ি কৃষ্টপুর গ্রাম প্রথম নিরক্ষরতা মুক্ত গ্রাম হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিতি পায়। এই সাফল্য দেখার জন্য আসতে চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তার আর আসা হয়নি। পরে ওই গ্রামে আসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধূরী ও অর্থনীতিবিদ ড. আনিসুর রহমানসহ দেশ বরেণ্য অনেক ব্যক্তিবর্গ। মোকছেদ তার সাফল্যের জন্য রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন নির্লোভ পরোপকারী সাদা মনের মানুষ। শুধু সমাজকর্মীই নয়, ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধাও।
বঙ্গবন্ধু তাকে ঢাকায় বাড়ি ও চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আপত্তি তুলে বলেছিলেন এলাকায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করবেন। প্রান্তিক ঘরে জন্ম তার। অল্প জমিতে আবাদ করে সংসার চালাতেন। জীর্ণশীর্ণ কুটিরে থাকতেন তিনি।
অথচ ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান এই মহানায়ক। তার স্ত্রী ও এক ছেলে দুই কন্যা নিয়ে অল্পতেই তুষ্ট ছিলেন। বর্তমানে মোকছেদ আলীর পরিবার নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে দিন যাপন করছে। তার ছেলে আলামীনের আক্ষেপ প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসেই কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। কিন্তু তেমন কোনো রকম সহায়তা দিচ্ছে না কেউ।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, মোকছেদ আলীর পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।