ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা
ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তনালিতে রোবট
প্রকাশ: রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:০১ এএম  (ভিজিট : ৩৭২)
মানবদেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে জটিল কাজে ব্যবহার করা যাবে এমন ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট তৈরির দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ যুগান্তকারী প্রযুক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে বলেও দাবি তাদের।

রক্ত জমাট বাঁধার ওষুধের ছোট ছোট প্যাকেটওয়ালা বিভিন্ন চৌম্বকীয় ন্যানোবট বা ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট তৈরি করেছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলে যাওয়ার জন্য এগুলোকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ’-এর স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহ-নেতৃত্বে এতে গবেষকরা দেখিয়েছেন, অ্যানিউরিজমের কারণে মানুষের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে এ প্রযুক্তি। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এ রোগে। অ্যানিউরিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের ধমনিতে রক্তে ভরা একটি স্ফীত অংশ, যা ফেটে গিয়ে মারাত্মক রক্তপাত ঘটাতে পারে বা স্ট্রোক ও বিকলাঙ্গতার কারণ হতে পারে। আরও সহজ করে বলতে গেলে অ্যানিউরিজম মানে মগজের কোনো ধমনিতে রক্ত চাপ বেঁধে একটি জায়গা ফুলে ওঠা। 

এ ধরনের অ্যানিউরিজম প্রায়শ মাত্র কয়েক মিলিমিটার পুরু হয় ও তার কোনো উপসর্গ থাকে না। অ্যানিউরিজম যতক্ষণ পর্যন্ত ফেটে না যাচ্ছে, ততক্ষণ আশঙ্কার কিছু নেই। কিন্তু ফেটে গেলে ভয়ংকর; অর্ধেক রোগী সঙ্গে সঙ্গে কিংবা কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান।

মাথায় রক্তক্ষরণের বিপদ শুধু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। একটি পন্থা হলো রোগীর কুঁচকি দিয়ে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে মগজের সংশ্লিষ্ট ধমনি পর্যন্ত চলে যাওয়া। ওই ক্যাথিটার দিয়েই অ্যানিউরিজমে প্ল্যাটিনামের অতি সূক্ষ্ম প্যাঁচানো তার ঢোকানো হয়, যার ফলে ফোলা জায়গাটাতে আর কোনো রক্ত ঢুকতে পারে না। অ্যানিউরিজমটিকে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, তার ভেতরের রক্তও আর জমাট থাকে না, বরং তরল হয়ে আসে।

অন্য উপায়টি হলো সরাসরি মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার। সে জন্য সবচেয়ে কাছ দিয়ে অ্যানিউরিজম পর্যন্ত পৌঁছানো দরকার। খুব সাবধানে কাজ করতে হয়-অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অ্যানিউরিজমটায় টাইটানের তৈরি ক্লিপ লাগাতে হয়। চাপ বাঁধা জায়গাটার ঠিক নিচে ক্লিপ বসিয়ে ফোলা জায়গাটাতে আর যাতে রক্ত না ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা হয়-কাজেই ফেটে যাওয়ার আর কোনো ভয় থাকে না। চিকিৎসকদের কাছে এসবই নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হলেও ঝুঁকিটা কম নয়। নতুন এই রোবট তৈরির পর এ চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

ধমনিতে হাজার হাজার কোটি বটকে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করান চিকিৎসকরা, এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বট মানবদেহের লোহিত রক্ত কোষের আকারের প্রায় বিশ ভাগের এক ভাগ। এরপর চুম্বক ও মেডিকেল ইমেজিং ব্যবহার করে দূর থেকে এদের মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের অংশে নিয়ে যান চিকিৎসকরা।

এসব ক্ষুদ্রাকৃতির বট এক ঝাঁকের অবস্থানে আসার পর গবেষকরা এদের একসঙ্গে ধরে রাখতে ও এদের আবরণকে গলনাঙ্কে উত্তপ্ত করতে চুম্বক ব্যবহার করেন। এর ফলে ওষুধটিকে সেই সুনির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-নেতৃত্ব দেওয়া ড. কিউ ঝৌ বলেন, এসব ক্ষুদ্রাকৃতির বট চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে, যা আমাদের প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে কম ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে ও দেহের বিভিন্ন জটিল অংশে সুনির্দিষ্টভাবে ওষুধের ব্যবহারে সহায়তা করবে।

গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে রক্ত প্রবাহে ফুটো বা ছিদ্র হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই সুনির্দিষ্ট স্থানে ওষুধ পাঠানোর সক্ষমতা রয়েছে এসব ক্ষুদ্রাকৃতির বটের, যাকে প্রযুক্তির সুরক্ষা ও কার্যকারিতার একটি মূল পরীক্ষা বলেছেন গবেষকরা।

গবেষকরা আরও বলেন, মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম বিশেষ করে স্টেন্টের (জাল টিউব যা করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ধমনি খোলা রাখতে সহায়তা করে) চিকিৎসায় ইমপ্লান্টের প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে আনতে পারে এসব ক্ষুদ্রাকৃতির বট।

এর আগে রক্ত জমাট বাঁধা দূর করার জন্য ক্ষুদ্রাকৃতির রোবটও তৈরি করেছে এই গবেষণা দলটি, যা স্ট্রোকের চিকিৎসায় সম্ভাবনা দেখিয়েছে বলে দাবি তাদের। সে গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ন্যানোসায়েন্স ও ন্যানোটেকনোলজি জার্নাল ‘স্মল’-এ, যার নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাজ্য ও চীনের গবেষকদের একটি দল।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close