ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নাকুগাঁও স্থলবন্দর
পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার হাজারো শ্রমিক
প্রকাশ: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৩১ এএম  (ভিজিট : ২৪০)
শেরপুরের কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে মৌখিকভাবে অতিরিক্ত কর দাবি করায় প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ ভারত থেকে পাথর আমদানি। ফলে লোকসানে পড়েছেন স্থলবন্দরের শতাধিক ব্যবসায়ী, কর্ম হারিয়ে কষ্টে দিন কেটেছে শ্রমিকদের। ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার হারিয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকার রাজস্ব। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে আমদানির পরিমাণের তুলনায় অধিক রাজস্ব দাবি করেন শেরপুরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফরিদুল আলম। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেখানে ৬ চাকার ট্রাকে ১২ টন পাথর পরিবহন নির্ধারণ করেছে, সেক্ষেত্রে ২৫ টনের রাজস্ব দাবি করে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একইভাবে ১০ চাকার ট্রাকে ভারত থেকে ২১ টন পাথর পরিবহন করা হলেও বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ টনের রাজস্ব দাবি করা হয়। আমদানি করা পণ্যের তুলনায় কেন বেশি রাজস্ব দিতে হবে, এদেশের ব্যবসায়ীদের এমন প্রশ্নের মুখে কোনো সদুত্তর নেই স্থানীয় রাজস্ব বিভাগের। লিখিত বা অফিসিয়াল নির্দেশনা চাইলে তা দিতেও ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় কম পাথর এনে বেশি রাজস্ব দিয়ে লোকসান গুনতে হয় বিধায় ভারতীয় পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। আগে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক পাথর এ বন্দরে আমদানি হলেও প্রায় এক বছর ধরে শুধু ভুটান থেকে আসছে ১০-১৫ ট্রাক পাথর। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। স্থবির হয়ে পড়েছে স্থলবন্দর। বিপাকে পড়েছে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক। পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

সূত্রমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে পৌণে ছয় কোটি টাকা। অন্যদিকে ভারতীয় পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দরে রাজস্ব আয় হয় মাত্র ৭১ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে ৬ চাকার ট্রাকে ৯ টন, ১০ চাকার ট্রাকে ১৫ টন, ১২ চাকার ট্রাকে ১৯ টন ও ১৪ চাকার ট্রাকে ২৪ টন পণ্য আমদানি কর হতো। কিন্তু জেলা রাজস্ব কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশনা হলো, প্রতিটি ট্রাকেই বাড়তি আরও ৬ টন পণ্য আনতে হবে। ভারতের ব্যবসায়ীরা বাড়তি পণ্য না দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। এতে বাধ্য হয়ে প্রায় সাড়ে ৪শ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ভুটান থেকে বাড়তি খরচে নিম্নমানের পাথর আমদানি করে লোকসান গোনেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ভুটান থেকে কিছু পাথর আনা হচ্ছে, তবে তা নিম্নমানের। গুণগত মান খারাপ থাকায় এ পাথরগুলো বিক্রি করতে পারি না।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এখানে ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ভারতীয় পাথর না আসায় আমাদের শ্রমিকরা বেকার হয়ে আছে।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দর দিয়ে ১০ চাকার গাড়িতে ২১ টন ও ৬ চাকার গাড়িতে ১২ টন পাথর আমরা নিয়ে আসছি। যেটি এখনও সিলেট বর্ডার দিয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান এসি হঠাৎ আমাদের বলেন, ১০ চাকার গাড়িতে ২৮ টন, ৬ চাকার গাড়িতে ১৮ টন মালামাল নিয়ে আসতে। কাজেই আমরা মনে করি, কাস্টমসের অসহযোগিতার কারণেই বন্দরটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে গত ১৯ আগস্ট ভারতীয় পাথর বোঝাই কয়েকটি ট্রাক এ বন্দরে এলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একই শর্তের বেড়াজালে আটকে দেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শেরপুরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফরিদুল আলমের কাছে এনবিআরের পত্র দেখতে চান। তখন দাবির পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে পরিবহনের পরিমাণ অনুযায়ী রাজস্ব দিয়ে অনেকটা জোর করে পাথর আনলোড করেন আমদানিকারকরা। ৪ দিনে মোট ১৭৫ টন পাথর আমদানি হয় এ বন্দরে। কিন্তু এরপর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদামে ঝামেলা হওয়ায় আবারও বন্ধ রয়েছে পাথর আমদানি। এদিকে এখনও জটিলতা কাটেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষেরও।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে পরিবহনের পরিমাণ অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা হলেও একমাত্র নাকুগাঁও স্থলবন্দরেই বেশি রাজস্ব দাবি করা হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে এনবিআরের কোনো চিঠিও দেখাতে পারেন না তারা। তিনি স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, কর্তৃপক্ষের এমন বাড়াবাড়ির কারণে রাজস্ব আয় কমে গেছে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফরিদুল আলম সদুত্তর তো দূরের কথা, কোনো কথাই বলতে পারেননি। একপর্যায়ে কিছু সময় চুপ থেকে সরে যান।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close