উত্তরবঙ্গের একমাত্র সাইলো রয়েছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। প্রায় ২০ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত সাইলোতে প্রথমে গম সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তী সময়ে চাল সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাইলো সড়কে পাঁচ শতাধিক তালগাছ রয়েছে। এসব তালগাছ থেকে প্রতি বছর তাল ও তালের শাঁস বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। নিয়ম অনুযায়ী এই তাল ও তালের শাঁস বিক্রির অর্থ সরকারের রাজস্ব খাতে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত কয়েক বছর ধরে তাল ও তালের শাঁস বিক্রির টাকা যাচ্ছে সাইলোর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের পকেটে।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা আফরোজ মুঠোফোনে বলেন, সাইলো সুপারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আমি তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেব। সাইলো সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে যে অশালীন ব্যবহার করেছেন তা সত্যিই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে জানার জন্য রাজশাহী বিভাগের সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহেদুল ইসলাম মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু সাইলোর বিষয়টি সরাসরি অধিদফতর দেখভাল করে সেহেতু অধিদফতরকে অভিযোগগুলো জানালে অধিদফতরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর অধিদফতর থেকে আমাদের যে নির্দেশনা প্রদান করবে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করব।
সাইলো সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টার পরও ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, বর্তমান সাইলো সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সাইলোতে রক্ষণ প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কর্তব্যে অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাইলো সুপারের লাগামহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই অন্যায়ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। নানা ধরনের হয়রানির শিকারও হতে হয় প্রতিবাদকারীদের।
সরেজমিন সাইলোর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, সুপারের মুখপাত্র হিসেবে সাইলোর প্রায় সব বিষয়েই নাক গলান গাড়িচালক আসাদুজ্জামান খোকন।
সাইলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শাখার কর্মচারী সুমন হোসেন বলেন, চলতি বছরেও সাইলোর তাল গাছগুলো থেকে গোপনে লক্ষাধিক টাকার তাল ও তালের শাঁস বিক্রি করা হয়েছে। সুপারের সব অপকর্মের সহযোগিতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছেন ড্রাইভার খোকন। খোকনের মাধ্যমেই তালগুলো সাইলো থেকে ট্রাকে ভর্তি করে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। অথচ বিগত সময়ে যারা সাইলোর ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে ছিলেন তারা সাইলোর রাস্তার গাছ থেকে উৎপাদিত সব ফল সাইলোর ভেতরে থাকা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বণ্টন করতেন। এরপর বাকি ফল নিয়মানুসারে বাইরে বিক্রি করে তা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সাইলো সুপার একচ্ছত্রভাবে নিজের বাহিনীর মাধ্যমে সাইলোর সবকিছু হরিলুট করে খাচ্ছেন। সাইলো সুপার মনে করেন, এটা তার নিজস্ব সম্পত্তি। সরকারি সম্পদ তিনি অবৈধভাবে কতিপয় লুটপাটকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমাফিক ব্যবহার করছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গাড়িচালক আসাদুজ্জামান খোকন মোবাইল ফোনে জানান, তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে যা বলেন তিনি তাই করেন। তিনি তার স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক তাল ট্রাকে করে যেখানে তার স্যার পাঠাতে বলেছেন সেখানে তিনি পাঠিয়েছেন। তবে কত টাকার তাল বিক্রি হয়েছে, কীভাবে বিক্রি হয়েছে তিনি সেসব কিছুই জানেন না। তার স্যার তাকে যা করতে বলেন তিনি শুধু তাই করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইলোর এক কর্মচারী বলেন, সাইলো সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী সান্তাহারে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে যোগদান করেন। এরপর থেকেই পুরো সাইলোকে তিনি নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে আসছেন। আমার ৩৩ বছরের চাকরি জীবনে এই রকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আমি কখনো দেখিনি।
সাইলো সুপার সবসময় আত্ম-অহংকার নিয়ে থাকেন। কোনো কর্মচারীকে তিনি মূল্যায়ন করেন না। আর যারা মাস্টার রোলে চাকরি করছেন তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম।না থাকলে গুড় বিক্রি হয় কীভাবে!
সময়ের আলো/আরএস/