ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দশ বছরেও সুফল পাননি এলাকাবাসী
পড়ে আছে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানির ট্যাঙ্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১০ এএম  (ভিজিট : ১৭৪)
১০ বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে জয়পুরহাট শহরের পশ্চিমাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য খনজনপুর এলাকায় নির্মিত ওভারহেড ট্যাঙ্ক। ওই ট্যাঙ্কের সঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য লৌহদূরীকরণ প্লান্ট নির্মাণ করার নির্দেশনা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ট্যাঙ্কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লৌহদূরীকরণ প্লান্টটি আজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি।

বর্তমানে ওভারহেড ট্যাঙ্কটি পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় ভেতরে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। দ্রুত ওই ট্যাঙ্ক চালু করে সুপেয় পানি সরবরাহ ও অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখার দাবি তাদের। কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। এ বিষয়ে জয়পুরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) খালেদুল হক বলেন, শুধু ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু লৌহদূরীকরণ প্লান্ট করা হয়নি। এ জন্য ওই ট্যাঙ্ক দিয়ে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। লৌহদূরীকরণ প্লান্ট নির্মাণ করলে ওই এলাকার অনেক মানুষ পানি সরবরাহের সেবা পাবেন। পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।

জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সরকার মোহাম্মদ রায়হানের সঙ্গে এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সদ্যই পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

জয়পুরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, আমি বারবার পৌরসভায় মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ, সুরাহাও হয়নি। এখানে অবশ্যই দুর্নীতি করা হয়েছে। তা না হলে এতদিনেও এটি চালু হবে না কেন? জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। আমি চাই এটি দ্রুত চালু করা হোক। এতে জনগণের উপকার হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারও নতুন প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব। জয়পুরহাট পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেদুল ইসলাম সোহেল বলেন, সবকিছুরই বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বিগত সময়ে মেয়রের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হয়নি। মূলত দুর্নীতির কারণেই ট্যাঙ্কটি আজও চালু হয়নি। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

জয়পুরহাট পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ জুন শহরে পানি সরববাহ ও স্যানিটেশন (জিওবি-এডিবি) সেক্টর প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাট পৌরসভার খনজনপুর এলাকায় একই প্যাকেজে ওভারহেড ট্যাঙ্ক ও লৌহদূরীকরণ প্লান্ট নির্মাণ শুরু করে জয়পুরহাট পৌরসভা। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৬৬৩ টাকা বিল উত্তোলন করে নিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ওই ট্যাঙ্ক দিয়ে এখনও চালু হয়নি পানি সরবরাহ। ভেতরে অকেজো হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ট্যাঙ্কসহ ও অন্যান্য সরঞ্জাম। জয়পুরহাট শহরের পূর্ব অঞ্চলের ট্যাঙ্ক থেকে পানি সরবরাহ হলেও পশ্চিমাঞ্চলের ট্যাঙ্কটি বন্ধ থাকায় সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। শুধু ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ করেই কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। লৌহদূরীকরণ প্লান্ট নির্মাণ করা হয়নি সেখানে। এ কারণে দীর্ঘ ১০ বছরেও চালু হয়নি সুপেয় পানির সরবরাহ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লৌহদূরীকরণ প্লান্ট নির্মাণ করে ট্যাঙ্কটি চালুর দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিন কথা হয় খনজনপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল চন্দ্র, স্থানীয় বাসিন্দা দারাব উদ্দিন, আবদুর রহিম, তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজসহ আরও অনেকের সঙ্গে। এ সময় তারা বলেন, এই ঘটনায় আমরা হতবাক। এলাকার অনেকে জানেই না যে, ট্যাঙ্কটি চালু নেই। পানির ট্যাঙ্কটি ১০-১২ বছর আগে তৈরির পর থেকে এখনও চালুই হয়নি। অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ট্যাঙ্কটি চালু না হওয়ায় এখান থেকে সুপেয় পানির সুবিধা এলাকাবাসীরা পায়নি। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ট্যাঙ্ক নির্মাণ করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টটি নির্মাণ করা হয়নি। পাম্প বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি যেগুলো ছিল সেগুলোও গায়েব হয়ে গেছে। এই ট্যাঙ্ক চালু না হওয়ায় এই এলাকায় শহরের সিও কলোনি ও বাসস্ট্যান্ডের অনেক দূরের ট্যাঙ্ক থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। অনেক সময় ঘোলা, নোংরা ও খাওয়ার অযোগ্য পানি আসে। তাই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত এই ট্যাঙ্কটি চালু ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close