ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

স্মরণকালের বন্যায় লণ্ডভণ্ড বসতভিটা
পুনর্বাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্যার্তরা
প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:৩৯ পিএম আপডেট: ০২.০৯.২০২৪ ১০:৫৪ পিএম  (ভিজিট : ২৫৫)
কারো ঘর ভেঙে পড়ে আছে। কারো ঘর আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েছে আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল। আবার ফেনীর নিচু এলাকায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস হওয়া এসব লোকজন কোথায় থাকবে বা কার কাছে গিয়ে উঠবে তা তারা কিছুই জানেন না। স্ত্রী-সন্তানরা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে, কেউবা আবার পরিবার নিয়ে রয়েছেন মসজিদের ছাদে। কিভাবে আবার নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি হবে কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তা নিয়ে যেন চিন্তার অন্ত নেই।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফেনীতে সরেজমিনে ঘুরে বন্যাদুর্গতদের মাঝে এসব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

ফেনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে স্থানীয়দের মাঝে। টিনের বাড়ি ও মাটির অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। নদী পাড়ের কিছু বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীর মাঝে। বাড়িঘর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ফুলগাজী উপজেলায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি নিচে নেমে গেছে। সাথে বিলীন হয়ে গেছে অনেকের বসতবাড়ি। জেলার ফুলগাজী উপজেলার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফুলগাজীর দক্ষিনবড়ইয়া, বটতলার নদীর নিকটবর্তী অধিকাংশ মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে আছে, নদী তীরবর্তী অনেকের ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। পরশুরাম উপজেলার বাউরখুমা তালুকপাড়া, বাউরপাথরসহ জেলার অন্যান্য এলাকায়ও ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে দাগনভূইয়া উপজেলার লক্ষ্যাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বন্যার কবলে পড়ে তাদের বাড়িঘর সব বিলীন হয়ে গেছে মাথা গোজার ঠাঁই টুকুও এখন নেই। পরিবারের নারী সদস্যদের এক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন আত্নীয়স্বজন, মসজিদের ছাদে বা অনেকে অবস্থান করছেন আশ্রয়স্থলে।

ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিনবড়ইয়া গ্রামের ফয়েজ উদ্দীন সময়ের আলোকে জানান, রাতের বেলা ঘরে শুয়ে ছিলেন রাত ৪টা নাগাদ হঠাৎ জানতে পারেন বন্যার প্লাবনের কথা, কোনমতে ঘর থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বের হতে পারলেও ঘরের ভেতরেই থেকে যায় সব আসবাবপত্রসহ অনেক মালামাল। স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে। 

আক্ষেপ করে ফয়েজ উদ্দীন বলেন, এর চেয়ে ঘরের ভিতরে থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো এই অনাহার আর থাকার কষ্টে থাকতে হতোনা। এই বাড়িঘর ঠিক করার মতো কোন স্বামর্থ আমার নাই, এখন আমি আমার পরিবারকে নিয়ে কোথায় উঠবো। 

একই অবস্থা পরশুরাম পৌরসভার তালুখ পাড়ার বাসিন্দা বজলের রহমানের। ১২ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন একই বাড়িতে। বন্যার পানিতে তার মাটির ঘর ভেঙে পড়ে গেছে স্ত্রী-সন্তান আর নাত নাতনীদের নিয়ে এখন কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখে কোন মতে রাত্রি পার করছেন। বজলের পুত্রবধু বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামী রঙের কাজ করতো দিন এনে দিন খেতাম এখন তো কাজ নাই ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াই করতে পারছিনা ঘর উঠাবো কোথা থেকে। জানিনা আল্লাহ কবে তৌফিক দান করবে, ততোদিন এই কাপড়ের ছাউনের নিচেই থাকতে হবে।

ফুলগাজী বড়ইয়ার বিধবা নাসিমা আক্তার জানেননা তার ছোট মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবেন। কারণ বন্যার কবলে তার বাড়িও নদী গর্ভে বিলীন বিভিন্ন দিন বিভিন্ন জায়গায় সন্তান নিয়ে রাত্রী যাপন করছেন তিনি। তিনি বলেন, খেতে পারছিনা, মাথা গোজার ঠাই নাই। যদি মাথা গোজার একটা ঠাই থাকতো তাহলে হয়তো মেয়ের জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করতে পারতাম, আমাদের এইদিকে ত্রাণও আসেনা যে একটু খেয়ে বাচবো।

বন্যা পরিস্থির কারণে ফেনীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, যার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা বা উপজেলা শহর থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, এদিকে গাড়িঘোড়া না আসায় ত্রাণও আসেনা। অনেকেই ঢাকা থেকে আসেন ত্রাণ দিতে জেলার সম্মুখভাগে ত্রাণ দিয়ে তারা চলে যায়, আমাদের ত্রাণ নিতে গেলেও যেতে হয় ৫-৭ কিলোমিটার দূরে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার সময়ের আলোকে জানান, পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে টিম প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কাজ করছে, তারপর সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে তারপর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া বেসকারিভাবেও পুনর্বাসনে অনেকে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় উজানের পানি ও টানা বর্ষণের ফলে বন্যার কবলে থাকা ফেনীতে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বন্যার ক্ষতি। তবে বেশ কিছু এলাকায় এখনো লক্ষ্যাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সরকারি হিসেবে জেলায় এ পযর্ন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close