ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যানের অফিসে তালা
পরিষদে আসেন না চেয়ারম্যান
প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১২ পিএম  (ভিজিট : ৬৩৮)
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদরত-ই- খুদা মিলনের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক টাকা বিভিন্নভাবে লোকজনের কাছ থেকে নেওয়ার অভিযোগে প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টাকা নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। এদিকে চেয়ারম্যান নিজের জীবনের আত্মরক্ষার ভয়ে পরিষদে আসেন না। সরকার পতনের পর থেকে চেয়ারম্যানকে ইউনিয়ন পরিষদে ২/১ একবার দেখা গেলেও আর দেখা যায়নি, জানান স্থানীয়রা। টাকা না দেওয়া, জমি দখলসহ নানান অপকর্মের কারণে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অসংখ্য জনগণ চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। 

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তার অফিস কক্ষটি তালাবদ্ধ সরেজমিনে দেখা যায়। এর আগে, রোববার সকাল ১০ টায় ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্ধারিত অফিস রুমে তালাবদ্ধ করে দেন।

আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঠিক ভাবে অফিসে আসেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুদরত- ই- খুদা মিলন বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার দেখিয়ে  বিভিন্নভাবে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের কে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো, নিজের ক্যাডার বাহিনী দ্বারা জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তার নামে রয়েছে। তার নামে অসংখ্য মামলাও  চলমান রয়েছে।

বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে দিঘলগাঁও গ্রামের এক অসহায় বৃদ্ধ মহিলা আনোয়ারা বেগম (৭০) সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর এক মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছিলেন। খাসজমিতে যুদ্ধের পর থেকে এক মেয়ে নিয়ে সিপাইপাড়া বাজারের কাছে তার বসত ভিটায় বসবাস করছিলেন। মিলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দ্বারা ওই বৃদ্ধার বসত ভিটা ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করেন। এমন অভিযোগ তুলেন ওই বৃদ্ধা। এখন ওই বৃদ্ধা মানুষের দ্বারে দ্বারে আশ্রয়ের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে তিনি তার বসত ভিটা ফেরতের দাবি জানান। ওই খাস জমিতে চেয়ারম্যান মার্কেট হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।

ওই ইউনিয়নের দীঘলগাঁও গ্রামের আকিম উদ্দীন (দলু) জানান, অর্পিত সম্পত্তিতে দোকান নির্মাণের অনুমতির জন্য ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকাও দেননি, মার্কেটও নির্মাণ করতে দেয়নি। এখন আমি টাকা ফেরত চাই।

ওই ইউনিয়নের দিঘলগাঁও গ্রামের জফির উদ্দিন জানান, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ১৪ একর ৬৪ শতাংশ ওই চেয়ারম্যান জবরদখল করে রাখেন। কোর্টের মাধ্যমে রায় পেলেও জমি ফেরত দিচ্ছে না। কোর্টের রায় অনুযায়ী ঘড় ভাঙার দায়ে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ও মাথাফাটার দায়ে ৩০ হাজার মোট ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা তার কাছে পাওনা। কিন্তু তিনি টাকা দিচ্ছেন না উল্টো হুমকি দিচ্ছেন।

ওই ইউনিয়নের বাইমগছ গ্রামের ফারুক জানান, আমার কাছে চার লক্ষ টাকা চাইছে। আমি না দেওয়ায় আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। থানার অজ্ঞাত নামা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। আমি তার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। ওই ইউনিয়নের ফুটকিবাড়ি গ্রামের নকিবুল জানান, কুলি শ্রমিকের কাজ দেওয়ার কথা বলে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকাও দেননি এবং কাজেও দেননি।

ওই ইউনিয়নের হাওয়াজোত গ্রামের ওবায়দুল জানান, সিপাহি পাড়া বাজারে আমার বড় হোটেল ছিলো। আমি বিএনপি করি এবং তার নির্বাচন না করাই সে চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার দোকান ভাঙচুর করে। দোকানে থাকা ২ লক্ষ টাকা মালামাল সহ প্রায় ৮ লক্ষ তিনি ক্ষয়ক্ষতি করেছেন তার ক্যাডার বাহিনী দ্বারা।

পাথর বালী ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জানান, ২০১৭/২০১৮ সালের দিকে আমি ১ একর জমি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ক্রয় করি। জমি ক্রয়ের পর আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা নেন। আমি চাঁদা দেওয়ার পরেও আমার সমস্ত জমি জবরদখল করে নেয়। এরপর বিভিন্ন ভাবে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে। একাধিক বার জেলও খেটেছি।

কাগজপত্র স্বচ্ছ থাকা স্বত্বেও তার কাছ থেকে জমিটি দখলে নিতে পারছি না। এই রকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার নামে। মানুষ ভয়ে এতদিনে মুখ খুলেননি। তার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনি তার ইউনিয়নে। থানাকে কন্টাক্ট করে অজ্ঞাত নামা মামলায় ফাঁসানো দেওয়া ছিলো তার এক রকম  নেশা।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিলনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বিষয় এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, কি কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের রুম তালাবদ্ধ রয়েছে তা আমার অজানা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close