ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

পানির নিচে চাপা পড়েছে পানচাষিদের স্বপ্ন
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪, ৪:২৬ এএম  (ভিজিট : ১৯২)
সর্বনাশা বন্যা ও অতিবৃষ্টি সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার পানচাষিদের। পুরো উপজেলার সবগুলো পানের বরজ এখন পানিতে নিমজ্জিত। ধার-দেনায় জর্জরিত পানচাষিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৯০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদগঞ্জে প্রায় ১০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে গেছে। হাইমচর উপজেলার নয়ানী, লক্ষ্মীপুর, নীলকমল, আলগী, চরভৈরবীসহ প্রতিটি এলাকার পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পানচাষিরা।

এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় হাইমচরে ৯০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপজেলায় পান চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন ১ হাজার ৭২ জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খোঁজখবর ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে নাÑএমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। প্রণোদনা আসার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার আরও বলেন, চলতি বছর পুরো চাঁদপুর জেলায় সর্বমোট ১৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলায় ১১৯ হেক্টর জমিতে এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। চাঁদপুরে মোহন নালী এবং চালতা বোঁটা জাতের পানের আবাদ ভালো হয়। ছায়াঘেরা উঁচু জমি পান চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

সরেজমিন স্থানীয় পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরজে পানি জমে অনেক পানে ইতিমধ্যে পচন ধরেছে। আবার অনেক পান ঝরে পড়ছে। দিনরাত ক্রমাগত বরজ থেকে পানি নিষ্কাশন করেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকরা। তারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এসব পানের বরজের পেছনে। কিন্তু বরজগুলো ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটছে পানচাষিদের। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে তাদের আশা-আকাক্সক্ষার স্বপ্ন পানির নিচে চাপা পড়েছে।

হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের নারী পানচাষি হেনা আক্তার বলেন, এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পানের লতা লাগিয়েছি। ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে পানের বরজ করেছি। একটানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পুরো পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমার পানের বরজে হাঁটুপানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশন করার চেষ্টা করেও পারিনি। সব পান পচে গেছে। এখন সরকার সহায়তা না করলে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। সরকারি সহায়তা পেলে আমরা অনেক উপকৃত হব।

পানচাচি আবু তাহের সরদার বলেন, ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছি। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুটি পানের বরজ। এখন শ্রমিক নিয়ে পানি নিষ্কাশন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। পানের বরজের ভবিষ্যৎ কী হবে তাও বলতে পারছি না।
উত্তর আলগী ইউনিয়নের দুই পানচাষি শাহজাহান সরদার ও মকজুল সরদার বলেন, আমাদের পানের বরজ পুরোপুরি শেষ। ৮-১০ দিন ধরে পানি নিষ্কাশন করেও কাজ হচ্ছে না। শিকড় পচতে শুরু করেছে। অপরিপক্ব পান ছিঁড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি আমরা কীভাবে পোষাব?


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close