স্বল্পোন্নত দেশের তকমা থেকে উত্তরণের আগেই আমাদের বাস্তবসম্মত ও সত্যিকার পরিসংখ্যান নির্ণয় করতে হবে। এই উত্তরণ সফল হলে বা বিলম্বিত হলে আমাদের কী লাভ হবে সেই বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যা ভবিষ্যতে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় আমাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর পল্টনস্থ ইকোনমিক রিনপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে আয়োজিত মিডিয়া কর্মশালায় সুশীল সমাজ প্রতিনিধি ও অর্থনীতি সাংবাদিকবৃন্দ এসব কথা বলেন। এ সময় তারা ডব্লিউটিওতে বাংলাদেশের দেন-দরবার শুরু করার আগে দেশটির নানা খাতের তথ্য অসঙ্গতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইক্যুইটিবিডি এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে আজ “ডব্লিউটিও-র বাণিজ্যনীতি এবং বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ” শীর্ষক এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অব বাংলাদেশ”একটি মিডিয়া ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা এবং সভা পরিচালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
মিডিয়া কর্মশালায় বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৫০ জনের অধিক অর্থনৈতিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক জনাব হাফিজুর রহমান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী। বরকত উল্লাহ মারুফ ডব্লিউটিওর বিভিন্ন চুক্তির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ইক্যুইটিবিডি এবং কোস্ট ফাউন্ডেশন ২০০৫ সাল থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে। সে বছর আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক ডব্লিউটিও সেল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম যাতে ডব্লিউটিও বিষয়ক সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং সেখানে বাংলাদেশের দেন-দরবার করার সক্ষমতা তৈরি করা যায়।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তকমা থেকে উত্তরণের আগেই আমাদের বাস্তবসম্মত ও সত্যিকার পরিসংখ্যান নির্ণয় করতে হবে এবং এই উত্তরণ সফল হলে বা বিলম্বিত হলে আমাদের কী লাভ হবে সেই বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যা ভবিষ্যতে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় আমাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে সৃষ্ট তথ্য ও পরিসংখ্যানের ব্যাপক অসঙ্গতি রয়েছে যার ফলে সেখানে কৃষি এবং মৎস্য সহ বিভিন্ন খাতে দেন-দরবারের নৈতিকতা হারাতে হতে পারে।
অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য, এবং ডব্লিউটিও সেলের সাবের মহাপরিচালক জনাব হাফিজুর রহমান তার বিশেষজ্ঞ বক্তব্যে বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের উভয় দিকেই আমাদের সুবিধা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে আমরা উপকৃত হব, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে খোলামেলা প্রতিযোগিতার ফলে আমাদের দক্ষতা বাড়বে। অন্যথায় সুবিধা পেতে পেতে আমাদের মধ্যে আলস্য তৈরি হবে। আবার গ্র্যাজুয়েশন কয়েক বছরের জন্য বিলম্বিত হলেও আমরা উপকৃত হব এবং এতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অব্যাহত সুযোগ সুবিধা পেতে থাকব। আমাদের যেকোন একটি বেছে নিতে হবে।
ইআরএফ এর সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের উচিত হবে সব জাতীয় তথ্য পর্যালোচনা করা এবং উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে জন্য উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় আরও দশ বছর পিছিয়ে দেয়া।
অধিবেশনের সঞ্চালক, ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব আবুল কাশেম উপস্থিত সকল অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের ডব্লিউটিওর বাণিজ্যনীতিসমূহ বোঝার এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
সময়ের আলো/জেডআই