ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪, ৫:২০ এএম  (ভিজিট : ৩৫৮)
প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর থেকে ঢাকার দুই সিটির মেয়রকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলররাও অফিস করছেন না। অধিকাংশ প্রতিনিধি আত্মগোপনে। ফলে দুই সিটির সেবা কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। নাগরিকরা বঞ্চিত হন সেবা পাওয়া থেকে। 

এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা না থাকায় সেবা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন সাধারণ মানুষ। মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় বর্জ্য অপসারণ, মশক নিধন, স্বাস্থ্যসেবা ও জন্ম-মৃত্যু সনদের কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। তবে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ার পর সবকিছু সচল হলেও সেবা নিতে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানায় নগরবাসী। দুই সিটির অধিকাংশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিভিন্ন কর্মকর্তারা এখনও আত্মগোপনে থাকায় সেই জায়গাগুলোতে কাজের গতি কমে গেছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৭২ কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮ জন ছাড়া অন্য কাউন্সিলররা অফিস করছেন না। বেশিরভাগ কাউন্সিলর অফিস না করার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। কারণ ঠিকমতো বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। কাজের মনিটরিংও হচ্ছে না। একইভাবে মশক নিধনের লোকদের দেখা নেই, মশার উৎপাত বেড়েছে, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। কিন্তু সেই অভিযোগ জানানোর জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরের দেখা মিলছে না।

নগরবাসীর অভিযোগ, এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। কিন্তু মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে পূর্ব প্রস্তুতির কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নাগরিক সনদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ ১৭ ধরনের সনদ ইস্যু করার কাজ করা যাচ্ছে না। মেয়র-কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকলেও নাগরিক সেবা ঠিক রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক বাতি, মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা জরুরি। প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যা খুব একটা সমাধান হবে না বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন সময়ের আলোকে বলেন, কিছু জনপ্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকলেও মশক নিধন, বর্জ্য, স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমসহ সব সেবামূলক কার্যক্রম প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে চলমান রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। ডিএনসিসির সব পরিষেবা কার্যক্রমও চলমান। তবে অধিকাংশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এখনও অনুপস্থিত। ফলে কিছু ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কাউন্সিলের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হবে। সনদ ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা সময়ের আলোকে বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে কিছু কাজ অবশ্যই বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে নাগরিক সেবা কার্যক্রমসহ রুটিন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। গুরুত্বসহকারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন ও সড়ক বাতিসহ সব সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টে যে পরিমাণে ডেঙ্গু রোগী ছিল এ বছর তা অনেকটাই কম। ডিএসসিসির মশক নিধনের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সময়ের আলোকে বলেন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রকে সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কাজে তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাদের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ খুবই কম। এ কারণে কাজ করতে কিছুটা বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া এই দুই সিটির নির্বাচন খুবই সন্নিকটে। এর ফলে কম সময়ে কতটুকু সফল হবে সেটিও দেখার বিষয়। প্রশাসককে এ মূহূর্তে একটি ডাটা রোল অ্যাপ্লাই করতে হবে। যাতে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যেন সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয়।

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তাদের অফিস বন্ধ থাকলে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সংকট উত্তরণের জন্য আঞ্চলিক অফিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আঞ্চলিক অফিসগুলোর সবাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্প্রতি আন্দোলনের কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনের কার্যক্রম রুটিনমাফিক হয়নি। সে জন্য ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ছে। বৃষ্টির মধ্যেও সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করার ফলে বাড়ছে দুর্ভোগ। বিষয়গুলো প্রশাসককে দেখতে হবে। এ ছাড়া মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি করপোরেশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ বর্তমানে অনেকেই উপস্থিত নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবার পরিসর বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। খালের ময়লা পরিষ্কার করে ও অবৈধ দখলমুক্ত করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সব নৈমিত্তিক সেবাগুলো অব্যাহত রয়েছে। ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক ড. মহ. শের আলী সময়ের আলোকে বলেন, আগের চেয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। আমরা যেসব সেবা নাগরিকদের দিয়ে থাকি সেগুলো আরও সুন্দর, সুচারুভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া এটি তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এসটিএসে রাখা এবং সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া। পুরো কার্যক্রম এক দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হচ্ছে। আমরা নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, নাগরিক সেবা সুন্দরভাবে, আরও দক্ষতার সঙ্গে জনগণকে সেবা দিতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলরদের অবস্থানের বিষয়ে সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। 

তবে এখনও অনেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ছাড়াই কাজ চলছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত যে সমস্যা ছিল সেটি দূর হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমেই সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ডিএসসিসি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক কমেছে। এ ছাড়া মশক নিধনে আমাদের যে কার্যক্রম তা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ সেবা নিয়ে অভিযোগ করেননি। তাই আশা করছি, আমরা সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছি।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close