ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

২২ খালে ঘিরে থাকা শহরেও বৃষ্টি নামলেই জলাবদ্ধতা
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪, ৪:১৮ এএম  (ভিজিট : ২৪৬)
ঝালকাঠি শহরে একসময়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জালের মতো প্রবহমান ছিল ২২টি খাল। এসব খাল দিয়ে ‘দ্বিতীয় কলকাতা’খ্যাত বাণিজ্যিক নদীবন্দর ঝালকাঠি শহরে ছোট-বড় নৌযান চলাচল করত। এসব খালের উৎপত্তিস্থল ছিল সুগন্ধা ও বিষখালী নদী। এ দুইটি নদীই শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে। তবে ২০ বছর ধরে দখল-দূষণে শহরের অভ্যন্তরের এই খালগুলোতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বৃষ্টি হলে এসব খালে পানি জমে থাকে। অনেক খালের পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। ময়লাযুক্ত সেই কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। মশা-মাছি বাড়ছে। দূষিত করছে গোটা শহরের পরিবেশ। 

এ বিষয়ে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, খালের পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের পরিবেশ দূষিত হয়ে মশার উপদ্রবও বেড়ে গেছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মুহা. আল আমিন বাকলাই বলেন, খালগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে পানি জমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। অনেকেই খালগুলো দখল করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ অনেক খালে ডিপ ড্রেন করে খালকে বিলুপ্ত করেছে। থানা খালকেও ডিপ ড্রেন করার প্রক্রিয়া শুরু করলে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তা রুখে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। পরিবেশ রক্ষার্থে এসব খাল খনন করা প্রয়োজন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুগন্ধা নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে ঝালকাঠি শহরের থানা খাল। এ খালের শাখা খালগুলো হলোÑহাবিব মিয়ার স’মিল থেকে সিটি ক্লাব হয়ে থানা রোড পর্যন্ত তরকারিপট্টি খাল, রিং রোড হতে সিটি পার্ক হয়ে ক্রীড়া সংস্থা পর্যন্ত সিটি পার্ক খাল, গার্লস স্কুলের পেছন থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ পর্যন্ত থানার পেছনের খাল, পৌর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পৌরসভার পেছন দিকে পদ্মা ডিপো পর্যন্ত ডিপো খাল। এ ছাড়া শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে বাঁশপট্টি খাল, কাঠপট্টি খাল, কাশারীপট্টি খাল, কলাবাগান খাল, জেলেপাড়া খাল, ঝালাইকর বাড়ির খাল, ওয়াপদা খাল, পাইলট বাড়ির খাল ও বেদেবাড়ির খাল। এসব খালের পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সিটি পার্ক খাল পাড়ে বসবাসকারী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘পানি খারাপ অইয়া গ্যাছে। হেয়ার পর যে গন্ধ, এই খালের পারে মানুষ থাকতে পারে না।’ খালের পাশের চায়ের দোকানি মো. রাসেল বলেন, পানির দুর্গন্ধে থাকতে পারি না। লোকজন এসে বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে হয়। পৌরসভার মধ্যে সব খালের পানিই কালো।

শহরের প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাসন্ডা নদীর কাঠপট্টি ট্রলার ঘাট থেকে উৎপত্তি হয়ে শহরের বাঁশপট্টি মাছুয়াবাজার ডাক্তারপট্টি শীতলা খোলা হয়ে জেলখানার সামনে পর্যন্ত খালটির নাম বাঁশপট্টি শীতলা খোলা খাল। প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই খালের শীতলা খোলা (উপজেলা পরিষদ) পর্যন্ত অংশে ২০-২৫ বছর আগেও নৌকা চলাচল করত। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই খালের শীতলা খোলা পর্যন্ত স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ছিল। তবে ২০০৪ সালে খোদ পৌর কর্তৃপক্ষই এই খালের সেকশন কালিবাড়ী থেকে উপজেলা পরিষদের পশ্চিম গেট পর্যন্ত ভরাট করে গভীর নালা ও রাস্তা নির্মাণ করে। বাঁশপট্টি শীতলা খোলা খালের পাঁচটি শাখা খালই শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের মুখ্য ভূমিকা পালন করত। মূল খাল ও পাঁচটি শাখা খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা পাকা ও আধাপাকা অবকাঠামো নির্মাণ করে অথবা মাটি দিয়ে ভরাট করে খালগুলো সংকুচিত করে ফেলেছে। ভরাট ও দখলের ফলে ৩০ থেকে ৪০ ফুট প্রস্থের খালের কোথাও কোথাও এখন দুই-তিন ফুট অবশিষ্ট আছে। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা প্রথমে মাটি দিয়ে ভরাট করে খালের প্রস্থ কমিয়ে ফেলে। এরপর সেখানে কাঁচা ও আধাপাকা রান্নাঘর, গোসলখানা, শৌচাগার ইত্যাদি নির্মাণ করে। আস্তে আস্তে দখল করা অবকাঠামো পুরোপুরি পাকা ভবন হিসেবে নির্মিত হয়।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close