বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের ৭ বছর পূর্ণ হবে ২৫ আগস্ট। কথা ছিলো চুক্তির ৩ মাসের মধ্যে শুরু হবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। কিন্তু এখনো মিয়ানমারে ফিরে যায়নি একজন রোহিঙ্গাও। এই রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খুন, গুম, অপহরণ, মাদক-পাচারসহ নানান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নের শিকার হয়ে উখিয়া-টেকনাফের ১২টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে নতুন পুরাতন মিলিয়ে ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। ফলে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ হয়ে উঠে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির। একই সাথে কক্সবাজারের মানুষের মানবিকতা হয়ে উঠে বিশ্বের জন্য উদাহারণ। স্থানীয়দের ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে নিজেদের পরনের কাপড় দিয়ে তখন এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছিল স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের মানবতা দেখিয়ে বিপদে ও আতঙ্কে এখন স্থানীয়রা।
উখিয়া-টেকনাফে গুম, খুন, হত্যা, মাদকপাচার, ডাকাতি, অপহরণ, জমি দখলসহ দিনদিন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।
স্থানীয় ৫ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রাকে করে তুলেছে বিপর্যস্থ। ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নিজেদের জায়গা, জমি, ভিটে, বাড়িসহ নাগরিকত্ব ফিরে পেলে মিয়ানমার চলে যাবেন তারা।
এদিকে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে আশ্রয় শিবির, প্রায় সময় শোনা যায় অস্ত্রের ঝনঝনানি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা জড়িয়ে পড়ে অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক-কারবারসহ অপরাধকাণ্ড। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চান স্থানীয়রা।
৮-এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের সংখ্যা বড় হওয়াতে একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। ওপার থেকে অবৈধ ইয়াবা, অস্ত্র ঢুকছে। তারা আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এপিবিএনের ৩টি ব্যাটালিয়ন কাজ করলেও থামছে না অপরাধ। তিনি বলেন, এ বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন ব্যবস্থায় এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বাজেট কমে গেছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছি। ফলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহলের সাথে আলোচনা করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানালেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
সময়ের আলো/আরএস/