বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার থেকেই তারা আর্থিকসহ সব ধরণের ত্রাণ সহায়তা সংগ্রহ করছেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা সহায়তা পেয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহচরীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সহায়তা নিতে মাঠে নামে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে তারা সহায়তা সংগ্রহ করেন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর সকল টোল ভাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বন্যার্তদের মাঝে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় এম খান লিমিটেড। এছাড়াও নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, ম্যাটস শিক্ষার্থী ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা শনিবার বিকেলে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার খাদ্য উপকরণ নিয়ে ইউজিভি’র শিক্ষার্থীরা বন্যা কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন ভাবে সহায়তার প্রায় ৬ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ও কাভার্ড ভ্যানে করে তারা বন্যা কবলিত এলাকায় যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তারা বন্যার্তদের জন্য মুড়ি, চিড়া, গুর, খেজুর, ওরস্যালাইন, মিনারেল ওয়াটার ২ লিটার, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ২টা, ফিটকারী, বিস্কুট, ঔষধ, পাউডার দুধসহ শিশু খাদ্য প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করা হবে।
অন্যদিকে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ট্রাকে ট্রাকে করে এসেছে ত্রাণ সহায়তা। কলেজের কলা ভবন ও অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসে পোশাকের পাহাড় তৈরি হয়েছে। সেগুলো সাইজ অনুযায়ী বেছে বেছে রাখছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কলেজের জিরো পয়েন্টে নানা ধরণের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাহাবুদ্দিন মিঞা বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (রোববার) বিকেলে রওনা দেবো কুমিল্লা ও ফেনীর উদ্দেশ্যে। দুইটি টিম করা হয়েছে আমাদের মধ্যে। এক গ্রুপ ত্রাণ সংগ্রহ করছে, অপর গ্রুপ ত্রাণ বিতরণ করছে। খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য স্যানিটারি প্যাড, ব্রাশ ও টুথপেস্ট, ওষুধ, স্যাভলন, নানা পদের ওষুধ, স্যালাইন, সাবানসহ নানা কিছু সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাছাড়া বন্যার্তদের জন্য কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।
এদিকে শ্রীশ্রী শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটি এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার টাকা সহায়তা পাঠিয়েছে বন্যার্তদের জন্য। সভাপতি লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু জানান, দুর্গোৎসবে আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণের খরচ কমিয়ে একটা বড় অংকের টাকা পাঠিয়েছি, যেটার অংক সংখ্যা বলতে চাচ্ছি না। তবে এবাদেও আমাদের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রায় ৫২ হাজার টাকা কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীতে পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে টাকা আরও আসতেছে যেটা খাগড়াছড়িতে পাঠানোর পরিকল্পনা করছি আমরা।
অপরদিকে বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদও ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে শনিবার থেকে। বিষয়টি সভাপতি ভানু লাল দে ও সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, দুর্গোৎসবে বাজেটের কিছু অংশ অনেক মন্দির কমিটি দিতে চাইছে বন্যার্তদের। সেটি সংগ্রহ করছি আমরা। তাছাড়া আমরা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সকল সদস্য ত্রাণ সংগ্রহে কাজ করছেন। এছাড়াও জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানের খরচের বড় একটি অংশ বরিশাল থেকে আমরা বন্যার্তদের জন্য পাঠাবো বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সময়ের আলো/আরআই