ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের শেষ নয় বছরে ব্যাংকের সিএসআর
৩ হাজার কোটি টাকাই গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে
সিএসআর এর অর্থ শেখ মুজিবের ওপর চলচ্চিত্র, শেখ রাসেল, শেখ কামালের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট ও মুজিববর্ষ উদযাপনে ব্যয় হয়েছে
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ৫:৫৬ পিএম আপডেট: ২৪.০৮.২০২৪ ৫:৫৮ পিএম  (ভিজিট : ৪৯৩)
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল- এই নয় বছর ব্যাংকগুলো সিএসআর হিসেবে ৭ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকাই প্রদান করেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। সিএসআর এর এই ৩ হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে বাধ্য করেছিলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার। যা চেক বা পে অর্ডারের মাধ্যমে দেয়া হলেও কোথায় ক্যাশ হতো তা কেউ জানতো না। 

শনিবার (২৪ আগস্ট) এফডিসিতে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব তথ্য জানানো হয়। ছায়া সংসদে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।  

এ সময় আরও জানানো হয়, ব্যাংক থেকে সিএসআর এর অর্থ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর চলচ্চিত্র, শেখ রাসেল, শেখ কামালের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট, মুজিববর্ষ উদযাপন, শেখ মুজিব ম্যারাথন, জাতীয় শোক দিবস, বেগম ফজিলাতুন্নেসা হাসপাতালসহ শেখ পরিবারের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, রানাপ্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দেশি বিদেশি অনেক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে অর্থ প্রদান করে। রানাপ্লাজার  এই তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছিল এবং তা কোথায় খরচ হয়েছে তা কেউ জানে না। এসব বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

ছায়া সংসদে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। বিগত সময়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়েছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ রেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য সেক্টরে যে সংস্কার করছে, তাকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। 

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। চাকরি হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক প্রভাবকে মেনে নিয়ে কাজ করেছে কিছু কিছু কর্মকর্তা, যা কাঙ্খিত ছিলনা। সমাজে আয় বৈষম্য ও বেকারত্ব মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পেছনে বহুমাত্রিক বৈষম্য টাইম বোমা হিসেবে কাজ করেছে। কতিপয় বড় শিল্প মালিকদের হিসেবের তথ্য চাওয়ায় ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতিষ্ঠান নয় ব্যক্তির দুনীর্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুরু হওয়ায় আমানতকারীদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুফল পেতে ভবিষ্যতেও তরুণদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমরা দেখেছি গত দেড় দশকে বিগত সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চরমভাবে ধংস করে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ গ্রহণ করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা বানিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি স্বনামধন্য ব্যাংককে লুটপাট করে তছনছ করে দিয়েছিল। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুনীর্তির খবর এখন সবার মুখে মুখে। জ্বালানি খাতে বিশেষ ব্যক্তিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। আর্থিক খাতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। ঋণ জালিয়াতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ। সরকার আর্থিক খাত নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে আশা করি এতে সকল আর্থিক অনিয়ম ও দুনীর্তির তথ্য প্রকাশিত হবে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন সত্তা ফিরিয়ে আনা উচিৎ। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। আমরা খুবই আশাবাদী বর্তমান অন্তর্বতীর্কালীন সরকার আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এখন শুধু দরকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের কাজে সহযোগিতা করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক ইকবাল আহসান। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close