ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফটিকছড়িতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি: নিহত ১, নিখোঁজ ২
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪, ৮:৫৬ পিএম আপডেট: ২৩.০৮.২০২৪ ৮:৫৯ পিএম  (ভিজিট : ৪২৫)
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত এক শিশু নিহত এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও দু’জন। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় এখনো সময় পার করছেন উপজেলাবাসী। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটি ছিল আতংকের। উপজেলাজুড়ে বন্যাদুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি, হাহাকার, আতংকে ভয়াল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে উপজেলার বাইরের স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে।

উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণে উপজেলা প্রশাসন, সেনা বাহিনীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকায় আশা জাগানিয়া। যে কারণে মানুষের জানমালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নসহ ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা, সুন্দরপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, নারায়ণহাট, ভূজপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। 

এছাড়া লেলাং, সমিতিরহাট, রোসাংগিরী, জাফতনগর, বক্তপুর, নানুপুর, ধর্মপুরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও সেচ্ছাসেবক কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে শত শত পরিবার। শত শত বাড়ি ঘর পানির নিচে। খাবার ওষুধ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক, গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো পানি ডুবে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে।

এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হালদার ওপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রিজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে। বিভিন্ন হাটবাজারে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে হাটবাজারের ব্যবসা বাণিজ্য।

এদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে নিঁখোজ হওয়ার একদিন পর সামি (১২) নামের এক শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। নিহত সামি দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সাদিনগরের ভাড়াটিয়া হামিদের পুত্র বলে জানা যায়।

জানা যায়, সামিসহ তিন শিশু বন্যার পানিতে নিম্নবর্তী সড়ক দিয়ে পার হওয়ার সময় তলিয়ে যায়। এ সময় দুই শিশুকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও সামিকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দূরবর্তী স্থানে তার মরদেহ পায় স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে এক বাবা ডুবে গিয়ে নিঁখোজের ঘটনা ঘটেছে ভূজপুরের কবিরা পাড়া এলাকায়। ছেলেটি বিদ্যুতের খুঁটি আগলে ধরে প্রাণে বাঁচে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। তবে রজি আহমদ নামে নিখোঁজ ব্যক্তিটি ও নারায়ণহাট ইউনিয়নের মির্জারহাটের হালদার কূলে বন্যায় আটকে পড়াদের বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া ইমরান কে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইমরান উপজেলার ইদিলপুর এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে এবং রজি আহমদ ভূজপুরের ৭নং ওয়ার্ডের সুলতান আহমদের ছেলে।

রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে।’

ধর্মপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘সর্তা নদীর বাঁধ উপচে বিভিন্ন বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।’

নাজিরহাট পৌরসভার মোহাম্মদ আলী নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ উপচে পানি আসে। দেখতে দেখতে পানি বেড়ে গিয়ে শত শত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে।’

এদিকে, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর চাষের জমি, পুকুর, মাছের প্রজেক্ট, পোল্ট্রি ফার্ম গবাদিপশুসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা চাষাবাদদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।’

উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের দুই লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তকর্তা (পিআইও) মো. আবুল হোসেন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বন্যাকবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০টি ইউনিয়ন ও ৫টি সদর মেডিকেল টিম। নিরাপদ
পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টিম গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে ফটিকছড়িবাসী। তবে বর্তমানে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে বিপুল সংখ্যক দুর্গতদের উদ্ধার করেছে। গতকালের তুলনায় আকজের পরিস্থিতি ভাল।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই শুকনো খাবার বিতরণ করতে চাচ্ছেন, বিক্ষিপ্তভাবে বিতরণ না করে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারেন। মানুষের জন্য সারাদেশের এই ভালোবাসা অভাবনীয়।’

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close