প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৫১ এএম (ভিজিট : ২৭৪)
মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তার সঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস যোগ করলে এ বছর বড় আকারের বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টায় দেশের ৭টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ৫০ পয়েন্টে পানি কমার প্রবণতা দেখা গেলেও বাড়ছিল ৬২ পয়েন্টে আর অপরিবর্তিত ছিল চার পয়েন্টে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। ফেনীতে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর এসেছে। এসব এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ।
এ অবস্থায় জানমাল রক্ষার সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। বন্যায় ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শহর রক্ষা বাঁধসহ অনেক বাঁধ ভেঙে গেছে। অনেক স্থানে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামনে বন্যার ভয়াবহতা বাড়লে যোগাযোগব্যবস্থা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে দুর্যোগের মাত্রা নিরূপণ করা হয় প্রাণহানির সংখ্যার নিরিখে। মানুষের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্যোগকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে চায় না। এখনও বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো থেকে কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর আসেনি বলে আমরা যদি এই দুর্যোগের মাত্রা উপলব্ধি করতে না পারি, তবে তা অচিরে আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
এসব নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল নিতে হবে। পরিস্থিতি সামনে শোচনীয় হতে পারে, এটা বিবেচনায় নিয়েই সরকার, স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা মনে করি, আগাম ও যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে মানুষের জীবন রক্ষা, দুর্ভোগ কমানো ও ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম রাখা যাবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাকে মাথায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি সব সংস্থা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি থাকবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সময়ের আলো/আরএস/