ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ইউনূসের ইমেজকে কাজে লাগাবেন কূটনীতিকরা
প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ২:৪৮ এএম আপডেট: ২১.০৮.২০২৪ ৭:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৩৮৫)
দেশের ইতিবাচক উন্নয়নে এবং কূটনীতিতে যেকোনো সমস্যা সহজে সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসভ্যালুকে কাজে লাগাবেন ঢাকার কূটনীতিকরা। প্রধান উপদেষ্টা দেশের পক্ষে তার ফেসভ্যালু ব্যবহারের জন্য ঢাকার কূটনীতিকদের অনুমতি দিয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে কর্মরত রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গে গত সপ্তাহে বৈঠক করেন। ওইসব বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকার কূটনীতিকদের বলেন, এ সময়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যারা (শিক্ষার্থী আন্দোলন) ঘটনা (৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার) ঘটিয়েছে তারা বড় পরিবর্তনের ডিমান্ড করেছে। রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। এখানে আন্তর্জাতিক পরিসরে আমরা যা করতে পারি তার মধ্যে একটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিসরে বিষয়টি ডিফেন্ড করা, সুবিধা নেওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হবে সেগুলোর সমাধান করা। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রধান উপদেষ্টার ফেসভ্যালু ব্যবহার করতে পারব। প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে দেশের প্রয়োজনে কূটনীতিকরা তার ফেসভ্যালু ব্যবহার করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার ফেসভ্যালু ব্যবহার করলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারব।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মরত একজন কূটনীতিক বলেন, ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের প্রবাসীরা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারে শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। শুধু তাই নয় প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহবোধ করছেন। 

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই তার সুনাম রয়েছে এবং তার ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল। ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনীতিকরা ব্যবহার করতে পারলে দেশের অনেক উপকার হবে। বিশ্বের সাতজন ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তিনি সেই সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন বাংলাদেশি। অধ্যাপক ড. ইউনূসের দেখানো পথেই যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কাজ করছে গ্রামীণ আমেরিকা। তার দর্শনের ভিত্তিতেই ৪০০ কোটি ইউরো ব্যয়ে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক ভিলেজ তৈরি হয়। এর আগে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। ড. ইউনূস বিগত ২০০৯ সালে দারিদ্র্য নিরসনে সহায়তা করার জন্য এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। 

এই উপদেষ্টা পরিষদ উন্নয়ন  সংস্থার মূল বিষয় ও নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ড. ইউনূসের দেখানো পথে দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ বা সামাজিক ব্যবসার মডেল বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ১৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলছে। এ ছাড়া পৃথিবীর ৮০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ড. ইউনূসের চিন্তা, কাজ, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও তার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি ২৪টি দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬০টির মতো সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ১৩০টিরও বেশি সম্মাননা পেয়েছেন ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে। কানাডা ও জাপানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ড. ইউনূসের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসকে সবাই এক নামেই চেনেন। কানাডার পাঠ্যপুস্তকে তার জীবনী থাকার পাশাপাশি দেশটির একটি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে ড. ইউনূসের ছবি টানানো আছে। ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যে ধরনের টানাপড়েন চলছিল ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এখানে স্বস্তি মিলবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ড. ইউনূস নিজেই টেলিফোন করে বলেছেন যে ঢাকা নয়াদিল্লির সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। 

গত ১৬ আগস্ট জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এক চিঠিতে ড. ইউনূসকে বলেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন করে জাতিসংঘ। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা পদে শপথ নেওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ড. ইউনূসের ফেসভ্যালু কূটনীতিকরা অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তার ইমেজ ব্যবহার করা যাবে। তার ইমেজ ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশ থেকে বাজেট সহায়তা জোগাড় করতে পারবে। যেখানে আগের সরকার ব্যর্থ হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন শর্ত রয়েছে সেখানেও ড. ইউনূসের ইমেজ ব্যবহার করে শর্ত শিথিলের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বৈশি^ক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও ভালো হওয়ার কথা। কারণ হচ্ছে সবাই ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে পছন্দ করে। যা ড. ইউনূসের মধ্যে দৃশ্যমান।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close