ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

গরুর খামার করে সফল লতা
প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ২:২১ এএম  (ভিজিট : ১৬০)
তাসলিমা হোসেন লতা। জামালপুরের মাটি আর বাতাস মেখে তার বেড়ে ওঠা। দশম শ্রেণিতে পড়াকালে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মননে কৈশোর প্রস্ফুটিত হতে পারেনি ঠিকঠাক। দুদ্দাড় ছুটে বেড়ানো কিশোরীটি বাঁধা পড়লেন বিয়ের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনে। বর মো. আবুল হোসেনের ছিল ছোটখাটো ঠিকাদারি ব্যবসা। কিন্তু বিয়ের পর কিশোরীটি বুঝতে পারলেন সংসারে আর যা-ই হোক সচ্ছলতা নেই। টানাটানির সংসারে জীবন থেকে কৈশোর উধাও। বুদ্ধিমানের মতো কাজে নেমে পড়লেন তিনি। বাড়ির উঠানের খোলা জায়গায় কাজের অবারিত সুযোগ ছিল। নিজের উঠানেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন লতা। 

তাসলিমা হোসেন লতা জামালপুর পৌরশহরের ডাকপাড়া সরকারবাড়ী এলাকার মৃত সরব আলীর মেয়ে। সরব আলী একজন কৃষক আর মা শাহানা বেগম গৃহিণী। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে তাসলিমা হোসেন লতা সবার বড়। ফলে পারিবারিকভাবেই কৃষির সঙ্গে গভীর যোগাযোগ ছিল লতার। 
বিয়ের পর সেটিকেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। 


জামালপুর পৌরশহরের বানিয়া বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন তাসলিমা হোসেন লতা। দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাবা-মার ইচ্ছায় ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে জামালপুর পৌরশহরের পশ্চিম ফুলবাড়িয়া এলাকার মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সংসারের শুরুর দিকে বরের স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হতো লতাকে। পরে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি হাঁস-মুরগি পালন ও হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় তার তৈরি হস্তশিল্পের পণ্য জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো। অবশ্য বর্তমানে সেই হস্তশিল্পের ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছেন। পাশাপাশি লতা একজন আঙিনাচাষিও। সংসারে সচ্ছলতার জন্য বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ করেন তিনি। 

তাসলিমা হোসেন লতাকে তার চারপাশের মানুষজন খুব পরিশ্রমী হিসেবে চেনেন। আত্মপ্রত্যয়ী তাসলিমার আত্মসম্মান খুব টনটনে। অভাবের সংসারে কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে কাজ করেন নিভৃতে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বিস্তর জায়গা থাকায় লতার ইচ্ছা জাগে গবাদিপশু পালন করার। সেখান থেকেই লতার গরুর খামারের যাত্রা শুরু হয়। 

২০০৭ সালে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি সিন্দি প্রজাতির দুধেল গরুর বাছুর কেনেন লতা। সংসারের আয় বাড়াতে গরু পালনের পাশাপাশি শুরু করেন হাঁস-মুরগি পালন। এভাবেই ধীরে ধীরে সংসারের আয়ের পথ বাড়ে। সেই একটি গরু থেকেই প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে লতা ১১টি গরুর মালিক। প্রথম গরুটি ৭৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেন লতা। মনোযোগী খামারি হওয়ায় এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এই খামারের টাকাতেই পাকা হয়ে ওঠে দালান, পাকা হয় আয়ের পথ। বর্তমানে তাসলিমা হোসেন লতার রয়েছে আরও তিনটি দুধেল গরু। এই গরুগুলো থেকে তিনি প্রতিদিন পাঁচ লিটার করে দুধ পেয়ে থাকেন। আশি টাকা দরে সেই দুধ বিক্রি করে মাসিক আয়ের পথ সুগম রাখেন লতা। নিজেদের ফসলি ধানক্ষেত থেকে যে খড় পাওয়া যায় সেটিই ব্যবহার করা হয় গরুর খাবারে। তাছাড়া গরুর ভুষি আর খৈল কেনার জন্য প্রতি মাসে বরাদ্দ থাকে ৪-৫ হাজার টাকা। খামারে প্রাত্যহিক যত্নের জন্য কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। এ কাজে লতাকে সহায়তা করেন বর আবুল হোসেন এবং দুই সন্তান তুষার আর তপু। প্রতিদিন গরুর দুধ দোয়ানোর পর এলাকার প্রতিবেশীরাই তার কাছ থেকে নগদ টাকায় খাঁটি দুধ কিনে নিয়ে যান। 

তাসলিমা হোসেন লতার দুই ছেলে। বড় ছেলে তুষার জামালপুর পৌরশহরের জিয়া কলেজে আর ছোট ছেলে তপু শহরের ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণির ছাত্র। এই দুই ছেলেকে নিয়েই এখন যত স্বপ্ন লতা-আবুল দম্পতির দুই চোখে।

সংসারের নানা কাজের ফাঁকে তাসলিমা হোসেন লতা শহরের বেলটিয়া যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে পোশাকের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। 

অত্যন্ত দক্ষ ও পরিশ্রমী তাসলিমা হোসেন লতা সম্পর্কে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের পোশাক বিভাগের প্রশিক্ষক মোছা. শামীমা বেগম মুন বলেন, লতা একজন আত্মপ্রত্যয়ী ও পরিশ্রমী নারী। তার জানার আগ্রহ খুবই বেশি। 

কাজকে প্রাধান্য দিয়ে লতা খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন। এ সময় তিনি লতার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন। লতা তো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে থাকতে চান না। তাই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ইলেকট্রনিকসের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আত্ম্নপ্রত্যয়ী তাসলিমা হোসেন লতা বলেন, আমার এই পরিশ্রম তখনই সার্থক হবে যখন আমার দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। দুই সন্তানের সফলতার আশায় পথ চেয়ে আছেন বাবা আবুল হোসেনও।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close