মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত সন্তান। নিজের সন্তান পার্থিব জীবনের শোভা এবং পরকালীন জীবনের নেকি অর্জনের পাথেয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদ ও সন্তানাদি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য, স্থায়ী সৎ কাজ তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাক্সিক্ষত হিসেবেও শ্রেষ্ঠতর’ (সুরা কাহাফ : ৪৬)।
তাই সন্তানের জন্য কখনোই বদ বা খারাপ দোয়া করতে নেই। সবসময় নেক দোয়া করা চাই। কারণ মা-বাবার দোয়ার প্রভাব পড়ে সন্তানের জীবনে। অনেক সময় মা-বাবা সন্তানের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে অভিশাপ দিয়ে বসেন। অথচ এই মা-বাবাই জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের যেকোনো ক্ষতি রোধ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু রাগের মাথায় বা অজান্তেই সন্তানের কত বড় ক্ষতি যে করে ফেলেন তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন না। পরে আফসোস আর আক্ষেপ ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিতÑতিনি বলেন, আমরা বাতনে বুওয়াত যুদ্ধের সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি মাজদি ইবনে আমর জুহানিকে খুঁজছিলেন। পানি বহনকারী উটগুলোর পেছনে আমাদের মধ্য থেকে পাঁচ, ছয় ও সাতজন করে পথ চলছিল। উকবা নামক এক সাহাবি তার উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিল এবং তাকে থামাল। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দিল। উটটি তখন একেবারে নিশ্চল হয়ে গেল।
তিনি তখন বললেন, তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ পড়–ক। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, নিজের উটকে অভিশাপদাতা এই ব্যক্তিটা কে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি এর পিঠ থেকে নামো। তুমি আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্ততির বিরুদ্ধে এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেন’ (মুসলিম : ৭৭০৫)।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, ‘তোমরা কোনো মুহূর্তেই নিজের বিরুদ্ধে, নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে বা সম্পদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করো না। কারণ হতে পারে যে সময় তুমি দোয়া করছ, তা দিনের মধ্যে ওই সময় যখন যা-ই দোয়া করা হোক না কেন তা কবুল করা হয়। তোমরা তো এ সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত নও।’ (মিরআতুল মাফাতিহ : ৭/৭০৩)
নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে বদদোয়া করার অর্থ হচ্ছে নিজেই নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)। সুতরাং নিজের ব্যক্তিগত বা পরিবারের কারও কোনো ক্ষতি হোক ইসলাম তা সমর্থন করে না।
তাই প্রতিটি মা-বাবার কর্তব্য হচ্ছে রাগের মাথায় শাসন করতে গিয়ে এমন কোনো শব্দ বা কথা যেন মুখ দিয়ে বের না হয়ে যায়, যাতে সন্তানের অমঙ্গল হতে পারে। নিজ সন্তানের ক্ষেত্রে জবানকে খুব সাবধানে রাখা। সন্তানের জন্য মা-বাবার মুখ নিসৃত দোয়া বা বদদোয়া সরাসরি আসমানে চলে যায় এবং কবুল হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া সরাসরি কবুল হয়। তারা হলেন- অত্যাচার ও অবিচারের শিকার ব্যক্তি, মুসাফির এবং সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া’ (তিরমিজি : ১৯০৫)। তাই সন্তানের জন্য সবসময় নেক দোয়া করতে হবে। সন্তানের জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর ও সাফল্যময়।
সময়ের আলো/জিকে