মার্কিন লেখক টরি পিটার্সের নতুন উপন্যাস ২০২৫ সালে প্রকাশ হবে। পিপল ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ‘স্ট্যাগ ড্যান্স : অ্যা নভেল অ্যান্ড স্টোরিজ’ নামের উপন্যাসটি প্রকাশ করবে র্যান্ডম হাউস। এই বইতে একটি উপন্যাস এবং তিনটি নভেলা রয়েছে। উপন্যাসটির নাম ‘স্ট্যাগ ড্যান্স’। নভেলা তিনটি হলো-‘ইনফ্যাক্ট ইয়োর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড লাভড ওয়ানস,’ ‘দ্য চেজার’ এবং ‘দ্য মাস্কার’।
টরি পিটার্স বলেছেন, এটি লিঙ্গ বিষয়ক একটি বই। এতে বিভিন্ন লিঙ্গ নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে তার অন্বেষণ করা হয়েছে। আমি আশা করি স্ট্যাগ ড্যান্স পড়ার শেষে আপনি আর নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না যে কে ট্রান্সজেন্ডার বা অন্য কোনো লিঙ্গ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করে বা করে না। ২০২১ সালে ‘ডেট্রানজিশন, বেবি’ উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন টরি পিটার্স। এটি তিনজনকে নিয়ে লেখা একটি উপন্যাস। এই তিনজনের মধ্যে একজন গর্ভবতী হওয়ার পরে তাদের জীবনে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এটি মূলত লিঙ্গ, পিতৃত্ব, প্রেম এবং ট্রান্সজেন্ডার জীবনের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। বইটি উইমেন্স প্রাইজ ফর ফিকশনের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পেয়েছিল। উল্লেখ্য, স্ট্যাগ ড্যান্স ২০২৫ সালের ১১ মার্চ প্রকাশ হবে।
প্রয়াত মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের লেখা সর্বশেষ বই চলতি বছরের ১৯ নভেম্বরে প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। লিটল ব্রাউন নামের প্রকাশনা সংস্থা থেকে এটি বের হবে। বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘জেনেসিস : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, হোপ অ্যান্ড দ্য হিউম্যান স্পিরিট’। বইটিতে সহ-লেখক হিসেবে আছেন প্রযুক্তিবিদ এরিক স্মিড এবং ক্রেইগ মুন্ডি। লিটল ব্রাউন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যে যুগ চলছে সে সম্পর্কে বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে এই বইটি। এতে কার্যকরী কৌশলের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এটি পাঠকদের স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে এবং নতুন যুগের আকর্ষণীয় সুযোগগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়।
কিসিঞ্জার বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। এগুলো হলোÑ‘আমেরিকান ফরেন পলিসি’, ‘হোয়াইট হাউস ইয়ার্স’, ‘অন চায়না’। ২০২১ সালেও তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন। ‘দ্য এজ অব এআই’ শিরোনামের বইটির সহ-লেখক ছিলেন, এরিক স্মিড এবং ড্যানিয়েল হুটেনলোচার।
উল্লেখ্য, হেনরি কিসিঞ্জার সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি ১০০ বছর বয়সে মারা যান। তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক ছিলেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার ২০২৪ সালের সামার রিডিং লিস্ট বা গ্রীষ্মকালীন পাঠের তালিকা প্রকাশ করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর এ ধরনের একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকেন তিনি। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি ১৪টি বইয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি গত কয়েক মাসে কিছু দুর্দান্ত বই পড়েছি। আমার পছন্দের কিছু বই শেয়ার করতে চেয়েছি। এরপর আমার কী বই পড়া উচিত তা আমাকে জানাতে পারেন।’
ওবামার বাছাই করা বইয়ের তালিকায় ৮টি ফিকশনের বই রয়েছে। এর মধ্যে দুটি চলতি বছরের বুকার প্রাইজের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এগুলো হলোÑপার্সিভাল এভারেটের ‘জেমস’ এবং রিটা বুলউইঙ্কেলের ‘হেডশট’। এ ছাড়া লিজ মুরের ‘দ্য গড অব দ্য উডস’, জ্যাক উইলিয়ামসের ‘বিউটিফুল ডেজ’, কাভেহ আকবরের ‘মারটিয়ার’, লিসা কোর ‘মেমরি পিস’, ক্যালিয়ান ব্র্যাডলির ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব টাইম’ এবং অ্যাডেল ওয়াল্ডম্যানের ‘হেল্প ওয়ান্টেড’ ওবামার তালিকায় রয়েছে।
বারাক ওবামার ২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন বইয়ের তালিকা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। বুকার লংলিস্টের ফিকশন দুটির বাইরে তিনি আরও পড়েছেন লিজ মুরের ‘দ্য গড অব দ্য উডস’, জ্যাক উইলিয়ামসের ‘বিউটিফুল ডেজ’, কাভেহ আকবরের ‘মারটিয়ার’, লিসা কোর লেখা বই ‘মেমরি পিস’, ক্যালিয়ান ব্র্যাডলির বই ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব টাইম’, অ্যাডেল ওয়াল্ডম্যানের বই হেল্প ‘ওয়ান্টেড’, জন গ্যাঞ্জ লিখেছেন ‘হোয়েন দ্য ক্লক ব্রোক’, হানিফ আবদুর রাকিবের ‘দেয়ারজ অলওয়েজ দিস ইয়ার’, মেরিলিন রবিনসনের ‘রিডিং জেনেসিস’, হ্যাম্পটন সাইডসের ‘দ্য ওয়াইড ওয়াইড সি’, জোনাথন ব্লিৎজারের ‘এভরিওয়ান হু ইজ গন ইজ হেয়ার’ এবং রিচার্ড রিভসের লেখা বই ‘অফ বয়েজ অ্যান্ড মেন’।
এদিকে সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নতুন বই এই বছরের শেষে প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা ক্লার্কসন পটার এটি প্রকাশ করবে। মিশেল ওবামা ৩১ জুলাই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে তার নতুন বই প্রকাশের ঘোষণা দেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই বইয়ে চিন্তামূলক কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করি এই ওয়ার্কবুকটি আপনাকে আপনার শক্তি আনলক করতে সাহায্য করবে।’
‘রভারকামিং : অ্যা ওয়ার্কবুক’ নামের বইটি চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বরে বের হবে। এটি তার বেস্টসেলার বই ‘দ্য লাইট উই ক্যারি’ এর ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। বইটি সে বছর নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলারের তালিকার শীর্ষে ছিল। ক্লার্কসন পটার জানিয়েছে, মিশেল ওবামার নতুন বইয়ে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা এবং অনিশ্চয়তা, বাধা ও আত্ম-সন্দেহের মুখে নিজেকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মিশেল, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী। ২০১৮ সালে তার লেখা স্মৃতিকথা ‘বিকামিং’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এটি বেস্টসেলার বই ছিল। ২০২২ সালে তিনি ননফিকশন বই ‘দ্য লাইট উই ক্যারি’ প্রকাশ করেন।
আরেকটি খবর হচ্ছে, সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প একটি স্মৃতিকথায় তার জীবনের গল্প বলবেন। বইটি আগামী শরতে প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। এটি প্রকাশ করবে স্কাইহর্স। এই স্মৃতিকথার নাম রাখা হয়েছে ‘মেলানিয়া’। এটি সাবেক ফার্স্ট লেডির প্রথম স্মৃতিকথা। তিনি এর আগে কখনো তার নিজের জীবনের গল্প পাঠকের সামনে তুলে ধরেননি।
মেলানিয়া ট্রাম্পের কার্যালয় জানিয়েছে, ‘এটি একজন নারীর একটি শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প। এই নারী নিজের পথ নিজে তৈরি করেছেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছেন এবং ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।’
সাবেক ফার্স্ট লেডি তার স্মৃতিকথা পড়ার জন্য পাঠকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি এমন একজন নারীর কাহিনি যিনি একটি অসাধারণ জীবনযাপন করেছেন। এই বইয়ে তার ব্যক্তিগত গল্প এবং পারিবারিক এমনসব ছবি থাকবে, যা আগে কখনো জনসাধারণের সঙ্গে ভাগ করেননি তিনি। মেলানিয়া প্রকাশের জন্য কোনো তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। বইটি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রকাশ হবে কি না তাও উল্লেখ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, মেলানিয়া ট্রাম্প ১৯৭০ সালে স্লোভেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় দেশটি সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। তিনি মডেল হওয়ার আগে ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর নব্বই দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১৯৯৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। ২০০৫ সালে দুজনে বিয়ে করেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন ফার্স্ট লেডি ছিলেন।
শেষ খবরটি হচ্ছে, চলতি বছরের বুকার প্রাইজের লংলিস্ট বা দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ফিকশনের জন্য দেওয়া মর্যাদাপূর্ণ এই ব্রিটিশ পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন ১৩ জন লেখক। এদের মধ্যে ৬ জন মার্কিন, ৩ জন ব্রিটিশ এবং ১ জন কানাডা, ডাচ, আইরিশ ও অস্ট্রেলিয়ান লেখক রয়েছেন।
৩০ জুলাই বুকারের ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর এই লংলিস্ট থেকে ছয়টি বইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ নভেম্বর লন্ডনে বিজয়ী লেখকের নাম ঘোষণা করা হবে। তিনি ৫০ হাজার পাউন্ড এবং আইরিশ নামে একটি ট্রফি পাবেন। আইরিশ-ব্রিটিশ উপন্যাসিক আইরিশ মারডকের সম্মানে এই ট্রফির নামকরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সাল থেকে বুকার প্রাইজ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ এর জন্য সালমান রুশদি, ‘দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে’ এর জন্য কাজুও ইশিগুরো মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পান।
২০২৪ সালের বুকার প্রাইজের লংলিস্ট এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। তালিক্য আছে কলিন ব্যারেটের বই ‘ওয়াইল্ড হাউজেস’, রিটা বুলউইঙ্কেলের বই ‘হেডশট’। পার্সিভাল এভারেট লিখেছেন ‘জেমস’, সামান্থা হার্ভের বই ‘অরবিটাল’, র্যাচেল কুশনারের ‘ক্রিয়েশন লেক’, হিশাম মাতার লেখা বই ‘মাই ফ্রেন্ডস’, ক্লেয়ার মেসুডের বই ‘দিস স্ট্রেঞ্জ ইভেন্টফুল হিস্টোরি’, অ্যান মাইকেলসের ‘হেল্ড’, টমি অরেঞ্জ লিখেছেন ‘ওয়ান্ডারিং স্টারস’, সারাহ পেরির বই ‘এনলাইটেনমেন্ট’, রিচার্ড পাওয়ারস লিখেছেন ‘প্লেগ্রাউন্ড’, ইয়ায়েল ভ্যান ডের উডেনের লেখা বই ‘দ্য সেফকিপ’ এবং শার্লট উড লিখেন ‘স্টোন ইয়ার্ড ডিভোশনাল’।
লেখক: সাংবাদিক
সময়ের আলো/জিকে