ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

১৬ বছর খাল দখল করে মাছ চাষ, অসহনীয় যন্ত্রণায় ২৫ পরিবার
প্রকাশ: সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ৯:৩৯ পিএম  (ভিজিট : ২৮৬)
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রবাহিত খাল দখল করে মাছ চাষ করার সত্যতা পাওয়া গেছে এক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রায় ২৫টি পরিবারকে সরকার দলীয় ক্ষমতার দাপটে ভোগান্তিতে ফেলে রেখেছে তারা। এসব পরিবার এবং কৃষকদের প্রতিবাদের ভাষা এমনভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল যে অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করা ছাড়া গত্যন্তর ছিলনা। মুখ খুললেই নেমে আসতো ভয় ভীতির খড়গ। খালটির নাম কালী বাড়ির খাল। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের দেউলী বাজার ঘেঁষা বেড়েরধন নদী থেকে উঠে কিছুদূর সামনে গিয়ে দুইটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা ডান দিকে মোড় নিয়ে বৈদ্যপাশা খালের সাথে মিলিত হয়েছে। অপর শাখাটি মকুমা গ্রামে এসে কাকড়াবুনিয়া খালে এসে পরেছে। যা পরবর্তীতে বৈদ্যপাশা খালের সাথে মিলিত হয়েছে। বেড়েরধন নদীর মুখে খালটির উপরে বাঁধ রয়েছে। যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে এলজিইডির পাকা সড়ক। এই বাঁধ থেকে খালের প্রবাহমান প্রান্তের কয়েকশো মিটার পর আরও একটি বাঁধ দেয় মো. মনির হোসেন খান নামক এক আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুই বাঁধের মাঝখানের দুই পাড় লোকালয়। যেখানে বসবাস কমপক্ষে ২৫টি পরিবার। এরা এই খালের পানির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। পানি দ্বারা দৈনন্দিন গৃহস্থালির নানাবিধ চাহিদা পূরণ করতো, আর কৃষকরা ক্ষেতে দিতো সেচ।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ শাসনের কুদৃষ্টি থেকে অন্যান্য স্থলের মতো রেহাই পায়নি এখানকার বাসিন্দারাও। সরকার দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে জিম্মি করে খাল বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করে। যার ফলে বাসিন্দাদের জীবনে শুরু হয় নরক অধ্যায়।

এরপর মো. মনির খানের কাছ থেকে দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আদনান হোসেন শাওন খালটির দখল নিয়ে নেয় এবং অবৈধভাবে মাছ চাষ করে। বর্তমানে আদনান হোসেন শাওনের দখলে রয়েছে।

যারা ভুক্তভোগী এদের মধ্য বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা খালটির অবমুক্তকরণ চায়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মো. সুমন হোসেন চৌকিদার (৪২) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খালে বাঁধ দেওয়া এবং মাছ চাষ করার ফলে আমরা ১৬ বছর যাবত পানি সমস্যায় ভুগছি। অনেক দূরে অর্থাৎ নদী থেকে পানি এনে আমরা দৈনিক কাজে ব্যবহার করে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলাশয়ে কীটনাশক প্রয়োগ, মাছের খাবার দেওয়ার ফলে দুই পাড়ের মাটি দিনের পর দিন দেবে যাচ্ছে। চলাচলের জন্য বাড়ি থেকে বের হবার দরজাটা পর্যন্ত অবশিষ্ট নাই। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ খালটি মুক্ত করে দেওয়ার জন্য।’

ভুক্তভোগী মো. হারুন হাওলাদার (৬০) বলেন, ‘ক্ষমতা দেখিয়ে আওয়ামী লীগের মনির হোসেন খান এবং পরে ছাত্রলীগের আদনান হোসেন শাওন খালটি দখল করে নেয়। পানির অভাবজনিত সমস্যা, দূষিত পানি, মশা মাছির উপদ্রবে দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আমরা নানাবিধ রোগ শোকে ভুগছি। তাই দাবি জানাই খালটি মুক্ত করে দেওয়ার জন্য।’

আরেক ভুক্তভোগী মো. আল আমিন (৩৩) জানান, তাদের চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। সব ভেঙে জলাশয়ে মিশে গেছে এবং যাচ্ছে। এই খালটির পানির উপর তারা নির্ভরশীল। খালে বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানিতে ঘর বাড়ি তলিয়ে যায়। অতি বৃষ্টিতে পানি বেড়ে আবার খরা মৌসুমে ক্ষেতে সেচ দিতে না পারায় একরের পর একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। সবসময় জলাবদ্ধ থাকায় পাড়ের মাটি গলে সীমানা বিলীন হয়ে গেছে। পাড়ের মাটি মাছেও খেয়ে ফেলছে। তাই খালটি মুক্ত করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম তদন্ত করে বাঁধ অপসারণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, জনগণের ভোগান্তি লাঘব হয় আমরা এমন ব্যবস্থাই নিবো।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  খাল দখল করে মাছ চাষ   কালী বাড়ির খাল   মির্জাগঞ্জ-পটুয়াখালী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close