ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করছেন ছাত্ররা
যাত্রাবাড়ীর কার্যক্রম চলছে ওয়ারী ও ডেমরা থানায়
প্রকাশ: সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ৫:৪৮ এএম আপডেট: ১৯.০৮.২০২৪ ৮:১৪ এএম  (ভিজিট : ৩৬৩)
নিজের ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন হাজেরা বেগম। সম্প্রতি সহিংসতায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে থানার ভেতরে যা ছিল তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাওয়ায় জিডি করতে পারেননি হাজেরা বেগম। থানার কার্যক্রম বন্ধ এবং পুলিশ না থাকায় জিডি করতে না পেরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাকে। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমার বাসা যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায়। আজ (গতকাল) সকালে আমার ভোটার আইডি কার্ডটি হারিয়ে ফেলি। এখন থানায় জিডি করতে আসার পর ছাত্ররা বলছে ডেমরা থানায় যোগাযোগ করতে। এই থানায় নাকি কোনো পুলিশই নেই। আর কবে আসবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে ডেমরা থানায় যাচ্ছি।

শুধু হাজেরা বেগমই নন, যাত্রাবাড়ী থানায় সেবা নিতে আসা প্রত্যেকেই পড়ছেন বিপাকে। কারণ পুলিশ না থাকায় যাত্রাবাড়ীর থানার সব কার্যক্রম চলছে ডেমরা ও ওয়ারী থানায়। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর সেখানে পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। মামলার আলামত ও নথিপত্র সবই পুড়ে গেছে। থানা ভবনের কোনো কক্ষে বসার মতো অবস্থাও নেই। এ অবস্থায় মামলা ও জিডি নেওয়ার কার্যক্রম চলছে পাশের থানা ডেমরা ও ওয়ারীতে। আর যাত্রাবাড়ী থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছে ছাত্ররা।

রোববার দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানায় সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনের সময় ভেঙে ফেলা থানার প্রধান ফটকের গেটটি এখনও মেরামত করা হয়নি। তা ছাড়া থানার ভেতর ও বাইরে আন্দোলনের সময় আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো পড়ে আছে সারিবদ্ধভাবে। থানার ভেতরের প্রতিটি জিনিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। থানার নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে রয়েছেন সেনাবাহিনীর একাধিক সদস্য। সেনা সদস্যদের সঙ্গে থানায় ছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।তবে থানায় কোনো ধরনের কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। অনেককেই সেবা নিতে এসে ডেমরা বা ওয়ারী থানায় ফিরে যেতে দেখা গেছে। কারণ যাত্রাবাড়ী থানায় এখনও কোনো পুলিশ সদস্য আসছেন না। সেখানে অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতেও দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। সিভিল পোশাকে অনেক পুলিশ সদস্য থানায় এলেও পরিচয় দিচ্ছেন না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে যে কয়েকটি থানা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানা হলো অন্যতম। ওই থানার সম্পূর্ণ ভবনটি অগ্নিসংযোগে পুড়ে যায়। তা ছাড়া থানার সব গাড়ি পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে থানাটি। তা ছাড়া এখনও আতঙ্ক কাটেনি যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ সদস্যদের। তবে পুলিশশূন্য এই থানা দেখভাল করছেন শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা সময়ের আলোকে বলেন, সরকার পতনের খবর পাওয়ার পরেই কিছু মানুষ থানায় হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি অনেকেই থানার ভেতরে লুটপাট চালায়। এমনকি একদল লোক ট্রাক ভরে থানার অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। যদিও ভাঙারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটি গ্রেনেড ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে ছাত্ররা। তবে বেশিরভাগ অস্ত্রই এখনও বেহাত হয়ে আছে।

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি থানার পরিষ্কার ও পাহারার দায়িত্ব পালন করছিল মারুফ নামের এক শিক্ষার্থী। সে সময়ের আলোকে জানায়, যাত্রাবাড়ী থানায় কোনো পুলিশ নেই। মাঝেমধ্যে কিছু পুলিশ সদস্য সিভিল পোশাকে আসেন। তবে তারা নিজেদের পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সিভিল পোশাকে এলেও বেশি সময় তাদের অবস্থান করতে দেখা যায়নি। পুলিশ না থাকায় সাধারণ মানুষও সেবা নিতে পারছেন না। অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছেন। কাউকে ডেমরা থানায়, আবার কাউকে ওয়ারী থানাতেও আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। থানা পরিষ্কারের কাজ চলছে যদিও এখনও সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি।

যেসব শিক্ষার্থী থানার নিরাপত্তায় কাজ করছেন তাদের একজন সাজিদ হোসেন। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, অনেক মানুষ তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে থানায় আসছেন। কিন্তু পুলিশ না থাকার কারণে তাদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। যারাই সেবা নিতে থানায় আসেন আমরা তাদের ডেমরা অথবা ওয়ারী থানায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। থানার পুলিশরা সাধারণ পোশাকে থানায় এলেও নিজেদের আড়ালে রাখতে চান। তবে আজ (গতকাল) থেকে পুলিশের পোশাকে কিছু সংখ্যক সদস্য এসেছেন। তবে তাদের কোনো ধরনের পুলিশি কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি। বর্তমানে থানার অবস্থাও খুব বাজে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে থানাটি। আমরা শিক্ষার্থীরা মিলে এটিকে পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করছি। তবে প্রশাসনের সাহায্য না পেলে আমাদের পক্ষে সব পরিষ্কার করা সম্ভব না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাত্রাবাড়ী থানায় দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা সময়ের আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থানায় এখনও কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তা ছাড়া থানায় এমন কোনো অবস্থাও নেই যেখানে বসে তারা কাজ করবেন। কেউ সেবা নিতে এলে তাকে ডেমরা বা ওয়ারী থানায় পাঠানো হয়। এই থানার জন্য আলাদাভাবে কোনো ফাঁড়ি থানাও তৈরি করা হয়নি। ফলে এখানে সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। থানার পুলিশও তাদের দায়িত্ব পালনে আসছেন না। অনেকে এলেও হাজিরা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ পোশাকে। তিনি আরও বলেন, থানার কার্যক্রম শুরু হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। কারণ পরিত্যক্ত গাড়ি ও জিনিসপত্র সরাতে না পারলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজকেও (গতকাল) পুড়ে যাওয়া কিছু জিনিস অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি গাড়ি ও বর্জ্যগুলো পরিষ্কার করা হবে। আশা করি দ্রুতই সবকিছু পরিষ্কার করে সেবার পরিবেশ তৈরি করা হবে। তা ছাড়া পুরো ভবনে যেসব ক্ষতি হয়েছে সেগুলোও মেরামত করতে হবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close