ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন চাটমোহর শাহী মসজিদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ৩:১০ এএম  (ভিজিট : ২২৪)
পাবনা জেলার অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চাটমোহরে একসময় মোগল আর পাঠানদের অবাধ বিচরণভূমি ছিল। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মাসুম খাঁ কাবলি নামের সম্রাট আকবরের এক সেনাপতি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই আজকের চাটমোহর শাহী মসজিদ নামে পরিচিত। বইপত্রে যাকে এখনও মাসুম খাঁ কাবলির মসজিদ বলেই উল্লেখ করা হয়। মসজিদের বাইরে রয়েছে ছোট্ট বেজমেন্ট। ভেতরের দৈর্ঘ্য ৩৪ হাত, প্রস্থ ১৫ হাত, উচ্চতা প্রায় ৩০ হাত। ক্ষুদ্র পাতলা নকশাখচিত লাল জাফরি ইটে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালটি সাড়ে চার হাত প্রশস্ত। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির সামনের দেয়ালের গায়ে কালেমা তাইয়্যেবা লিখিত একটি কালো পাথর এখনও প্রোথিত রয়েছে। 

মসজিদের উপরিভাগে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। সম্মুখভাগে তিনটি খিলান আকৃতির একটি গেট রয়েছে। পশ্চিমপাশে এ রকম খিলান আকৃতির আরও দুটি গেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে মেহরাবের চারদিকে রয়েছে ইটের সুন্দর কারুকার্য। অভ্যন্তরে আরও রয়েছে ছোট ছোট চারটি কুলুঙ্গি। মসজিদের বাইরে এবং ভেতরে দেয়ালের গায়ে জাফরি ইটের সুন্দর কারুকার্য দেখা যায়।

মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে দ্বিকেন্দ্রিক সুচালো খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। পূর্ব দিকের সম্মুখভাগে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড়। কেবলা দেয়ালের ভেতরের দিকে রয়েছে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার অবতল মেহরাব। 

এখানেও কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অন্য দুটি অপেক্ষা বড় এবং এর পেছনের দিকে রয়েছে আয়তাকার একটি প্রক্ষেপণ। মসজিদের ভেতরে অবস্থিত দুটি দ্বিকেন্দ্রিক সুচালো আড়খিলানের সাহায্যে এর অভ্যন্তরভাগকে তিনটি সমান বর্গাকার ‘বে’তে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ‘বে’র ওপরে রয়েছে সমান আকৃতির একটি করে অর্ধগোলাকার গম্বুজ। আড়খিলান এবং মেহরাব ও প্রবেশপথগুলোর ওপর থেকে নির্মিত বদ্ধ খিলান গম্বুজগুলোর ভার বহন করছে।

গম্বুজগুলো নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে বাংলা পেন্ডেনটিভ। সুলতানি রীতিতে মসজিদটির কার্নিশ সামান্য বাঁকানো। খিলানগুলোর স্প্যানড্রিলে এখনও গোলাপ নকশার চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি খিলান পথেরই দুইপাশে রয়েছে দুটি করে আয়তাকার খোপ নকশা। খোপ নকশাগুলো বর্তমানে ফাঁকা, তবে আদিতে হয়তো এখানে অলংকরণ ছিল। দেওয়ালের মাঝামাঝি অংশে ছাঁচে ঢালা ব্যান্ড নকশার একটি সারি রয়েছে। যে কারণে মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখতে দ্বিতল বলে মনে হয়। মেহরাবগুলো আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত এবং আদিতে এগুলোতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ছিল যার চিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গোলাপ নকশা, পুষ্পলতা এবং জ্যামিতিক নকশার মতো নানা রকম মোটিফ এখানে ব্যবহৃত হয়েছিল।

মাসুম খাঁ কাবুলি নির্মিত মসজিদটির ভেতরে একটি কালো বর্ণের ফলক ছিল, যা এখন রাজশাহী বরেন্দ্র মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। ফলকে খোদাইকৃত ফার্সি অক্ষরে মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। এক সময় মসজিদটি ধবংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটিকে পুনর্নির্মাণ করে। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আগমনে মুখর মোগল আমলের এই মসজিদ।

সময়ের আলো/আরএস




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close