ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আত্মগোপনে জনপ্রতিনিধিরা, নাগরিক সেবা ব্যাহত
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ২:১০ এএম  (ভিজিট : ৩৪৬)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে পৌরসভা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে করে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা কার্যক্রমও। 

জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সোমবার সময়ের আলোর প্রতিনিধিরা সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য জানান।

মিরসরাই: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের মিসরাইয়ের স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এখানকার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও দুটি পৌরসভার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে গেছেন। সোমবার সরেজমিন উপজেলার মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, এখানে উদ্যোক্তা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও নেই কোনো জনপ্রতিনিধি।

মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, এখানে নিজ কক্ষে কর্মহীন বসে আছেন উদ্যোক্তা মো. নিজাম উদ্দিন। এ সময় তার কক্ষে কোনো সেবাপ্রার্থীর দেখা মেলেনি। পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনির উদ্দিন বলেন, আমরা বর্তমানে আগের স্বাক্ষর করা নাগরিক সনদ দিতে পারছি। বাকি সেবা সম্পর্কে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জনগণ সেবা নিতে এলে আবেদন জমা নিতে।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, এখানেও উদ্যোক্তা, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও নেই জনপ্রতিনিধি। ৫ আগস্টের পর তারা সবাই আত্মগোপনে। পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কান্তি পাল বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন শতাধিক লোক ইউনিয়ন পরিষদের সেবা-পরিষেবা নিত। বর্তমানে জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ জনকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে। তবে আমরা আমাদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব সাহেব থেকে শহরে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে এসে কিছু সেবা দিতে পারছি। মিরসরাই পৌরসভায় দেখা যায়, এখানে দফতরের অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারে বসে থাকলেও নেই আগের মতো শোরগোল, মানুষের আনাগোনা। খবর নিয়ে জানা যায়, এখানেও সেবা ব্যাঘাত হচ্ছে।

এদিকে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা হয় মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরসভা কার্যালয়ে। সেখানে পৌর মেয়রের গাড়ি, উদ্যোক্তা কক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এতে পৌরসভার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পৌর কার্যালয় পরিদর্শন করেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন ও সেনা কর্মকর্তারা। 

পরিদর্শন শেষে ইউএনও বলেন, আমরা বারইয়ারহাট পৌরসভা কার্যালয় পরিদর্শন করেছি। সেখানে উদ্যোক্তা কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়েছে। অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা হয়েছে। দ্রুত পৌরসভার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার জনগণ তাদের নাগরিক সেবা-পরিষেবা না পাওয়ার বিষয়ে ইউএনও বলেন, আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সাতকানিয়া: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় স্থানীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, নিরাপত্তা কার্যক্রম যেহেতু শুরু হয়েছে, দ্রুতই জনপ্রতিনিধিরা কর্মস্থলে ফিরবেন। যদি তারা না আসেন, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, আওয়ামীপন্থি চেয়ারম্যানদের অনেকেই ক্ষমতার পালাবদলের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষানল থেকে বাঁচতে ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন না। ফলে পরিষদের সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সনদের আবেদন করেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না থাকায় প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন না। এতে জরুরি প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কাজ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়রা জানান, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনে খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। দায়িত্ব পালনে ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

তবে আত্মগোপনে থানা জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরা দাবি করছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই অনেকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেমন সাহস পাচ্ছে না তেমনি কর্মস্থলেও যেতে পারছেন না। তবে দ্রুত নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তাদের কার্যালয়ে যোগদানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে অনেক চেয়ারম্যান আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। জনগণের প্রয়োজনেই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজে গতি আনতে সবাইকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।

সৈয়দপুর: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপরই নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি কোথায় তা জানেন না পৌরসভার কর্মকর্তারা। এদিকে এক সপ্তাহ পার হলেও পৌর মেয়র কার্যালয়ে না আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। তবে কাউন্সিলর এবং পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। মেয়র রাফিকা আকতার পৌর মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আকতার হোসেন বাদলের স্ত্রী।

সোমবার সরেজমিন পৌর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের কক্ষ তালাবদ্ধ। অনুপস্থিত প্যানেল মেয়র শাহিন হোসেনও। কয়েকজন সেবাগ্রহীতা বসে আছেন মেয়রের কক্ষের সামনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে মেয়র পৌরসভায় আসছেন না। প্যানেল মেয়রেরও দেখা মিলছে না। তবে দুয়েকজন বাদে কাউন্সিলরা নিয়মিত আসছেন। কিছু কিছু সেবা আছে যা পৌর মেয়র ছাড়া দেওয়া সম্ভব নয়।

এ সময় সেবা নিতে আসা বেলাল হোসেন বলেন, জমির ওয়ারিশনামা দরকার। তিন দিন ধরে পৌরসভায় ঘুরছি। পৌর মেয়র নেই। এ অবস্থায় আমার সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আরেক সেবাপ্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ছেলের জন্মসনদ সংশোধন করার জন্য পাঁচ দিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু সমাধান পাচ্ছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সৈয়দপুরে গত পৌরসভার নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তা ন্যক্কারজনক। পৌরসভা সৃষ্টির পর এমন নির্বাচন দেখেননি তারা। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেয়নি। জোর খাটিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সরকার পতনের পরপরই পালিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র নানাভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন। সে জন্য আসলেই সংক্ষুব্ধদের হাতে অপদস্থ হতে পারেন, এমন শঙ্কায় পৌরসভায় তিনি আসছেন না।

সৈয়দপুর পৌর ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, আমরা কাউন্সিলরা নিয়মিত পৌর কার্যালয়ে আসছি। নিজ নিজ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সেবা দিচ্ছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয় রয়েছে, মেয়র যেখানে আত্মগোপনে আছে সেখানে গিয়ে ফাইল স্বাক্ষর করে আনা হচ্ছে।

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর জামান সময়ের আলোকে বলেন, একটা সরকার বিদায় হয়েছে। অন্য একটা সরকার এসেছে। বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। তবে মেয়রের অনুপস্থিতিতে সেবা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা হচ্ছে না।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close