ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শাবিপ্রবি শিক্ষকদের ১৮দফা
প্রকাশ: রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪, ১০:৪৮ এএম  (ভিজিট : ২৭৩৮)
দেশের চলমান সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১৮দফার প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) নিপীড়ন-বিরোধী শিক্ষক-সমাজ।

রোববার (১১ আগস্ট) নিপীড়ন-বিরোধী শিক্ষক সমাজের সংগঠক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম জানান, আমরা নবগঠিত সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারকে অনেক শ্রদ্ধা করি এবং বিশ্বাস করি যে, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার যোগ্য নেতৃত্বে অবিলম্বে চলমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে এবং নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে।

আমরা এই সরকারকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই এবং তাদের মহান লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার নিরিখে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।

প্রস্তাবনা সমূহ:

১. দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিতে হবে। কেননা বিগত খুনি সরকারের আমলে শুধুমাত্র দলীয় মতাদর্শী খুনিরা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে যা বিভিন্ন সময়ে হেলমেটধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে পুলিশ বাহিনীর যোগসাজশে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে গণহত্যা চালিয়েছে এবং যা এখনো চলমান। অতিসত্বর ঐ সকল অস্ত্রজমা নেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে সশস্ত্রবাহিনীর সহায়তায় সকল অবৈধ অস্ত্র এবং দেশের বিভিন্ন থানা থেকে লুটকৃত অস্ত্র পরিপত্র জারি করে সংগ্রহের জোর দাবী জানাচ্ছি।

২. দলীয় লেজুড় ভিত্তিক প্রশাসন নির্মূল করার জন্য সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বের করতে হবে (বিশেষ করে প্রশাসন ও পুলিশ)। অনতিবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি, নির্বিচারে গুলি, গণহত্যা, লুটতরাজের জন্য দায়ী সকল ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৩. দেশের সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকৃত বিচারপতিদের অতিসত্বর অপসারণ করতে হবে।

৪. বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভাব মূর্তি ফিরিয়ে এনে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মাঠপর্যায়ের পুলিশ প্রশাসনকে পরিচালনা করা যেতে পারে।

৫. দেশের বর্তমানে চালুকৃত শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম (বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে) অতি শীঘ্রই বাতিল করে বিশ্ববরেণ্য শিক্ষাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত চলমান কারিকুলাম স্থগিত করে আগের কারিকুলাম অনুযায়ী ২০২৪ সালের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে।

৬. শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অধিকতর বরাদ্দের জন্য এউচ এর নূন্যতম ৬% বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হল/ছাত্রাবাসে শুধুমাত্র ছাত্র/ছাত্রীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এউচ এর বরাদ্দের একটি অংশ ক্লাস রুম, গবেষণা এবং শিক্ষার্থীদের খাবারের মান উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে।

৮. পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক সকল পদে একাডেমিক, যোগ্য, সৎ-সাহসী ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়োগ দিতে হবে।

৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।

১০. শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব-এর পদসমূহে স্ব-স্ব বিষয়ে দক্ষ এবং স্ব-স্ব বিভাগ হতে ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

১১. বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে এবং জবাব দিহিতার আওতায় আনতে হবে। এই কমিশনের অধীনে পর শিক্ষার সিলেবাস ও পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। এ কমিশনের চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবশ্যই শিক্ষাবিদদের মধ্যে থেকে নিয়োগ দিতে হবে।

১২. চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে চলমান সকল উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ পুনর্মূল্যয়ন পূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দেশী, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দুর্নীতি বন্ধের কার্যকর উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

১৩. ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ বিভাগের ডাকাতি বন্ধ সহ সকল দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

১৪. বিদেশে বাংলাদের ভাব মূর্তি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণকে নিরপেক্ষ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জরুরীভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

১৫. সরকারি, স্বায়ত্ত্বব শাসিত, আধা-স্বায়ত্ত্বব শাসিত ও বেসরকারি সকল ধরণের প্রশাসনের গ্রোথিত দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

১৬. নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করে তার তালিকা প্রকাশ এবং নতুন করে ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে অতিসত্বর সুষ্ঠুও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৭. দেশের এই ক্রান্তিকালে সংখ্যালঘুও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার্থে বিশেষ টিম গঠন করার মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসীরা এগুলো ধ্বংস করার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সহাবস্থান কোন ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

১৮. শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে যুগোপযোগী করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে। শিক্ষা ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সংস্কার অতীব জরুরী মনে করছি এবং সেক্ষেত্রে আমাদের কোন অবদান রাখার সুযোগ দেয়া হলে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে অংশ গ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

তিনি আরও জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে অর্জিত স্বাধীন মাতৃভূমির বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা। বিগত ১৫ বছর যাবত সর্বস্তরের জনসাধারণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০২৪ এর সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।

শহীদদের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের তথা দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা।


সময়ের আলো/এএ/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close