ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

দুর্বৃত্তরা ভাঙলো শশীলজের ভেনাসের ভাস্কর্য, স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ
প্রকাশ: বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪, ৮:৫২ পিএম  (ভিজিট : ৩৬৪)
 ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছবি: কোলাজ

ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছবি: কোলাজ

ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় হামলাকারীরা এটি ভেঙে ফেলে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শশীলজ। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি বিভিন্ন পুরনো ও প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে এখানে। যার ফলে ময়মনসিংহ নগরীর অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত এই শশীলজ।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারীরা শশীলজে যায় তারা ভাস্কর্যটি ভেঙে মুখাবয়ব নিয়ে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অংশ ভেঙে টুকরো করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং সামাজিক অঙ্গনের মানুষেরা হতভম্ব। তারাসহ নগরবাসীর অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। শশীলজের ভবনটি বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর টাউন হল মোড়ে যখন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতারা জড়ো হয়ে আনন্দ উল্লাস করছিল ঠিক তখনই কিছু বুঝে ওঠার আগ মুহূর্তে একদল তরুণ-যুবক তারা লাঠিসোটা নিয়ে হুড়োহুড়ি করে শশীলজের ফটকে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ধাওয়া দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং এর কয়েক মিনিট পরেই পানির ফোয়ারার মাঝে অবস্থিত ভাস্কর্যটিকে ভেঙে ফেলে স্লোগান দিয়ে স্থানত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা। 

ভাস্কর্যটির কিছু টুকরো ফোয়ারার পানিতে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেলেও গলা থেকে মাথার অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন শশীলজের কিউরেটর সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, শত শত লোক দল বেঁধে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ভাস্কর্যের মাথার অংশ পাওয়া যায়নি। এটি অমূল্য সম্পদ ছিল। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেটি পুনরায় স্থাপন করা যাবে কিনা, সে বিষয় বলা যাচ্ছে না।
শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য। ফাইল ছবি

শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য। ফাইল ছবি


ভাস্কর্য ভাঙনের খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার এবং বুধবারে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সুশীল সমাজের নাগরিকবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা এ ঘটনার নিন্দা জানান এবং জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ জানান, এটিকে ধ্বংস করে ময়মনসিংহবাসীর মনে আঘাত দেয়া হয়েছে। এধরনের কাজের সাথে যারা জড়িত তারা বিকৃত রুচিসম্পন্ন। 

ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্পী পর্ষদ এর সভাপতি মো. রাজন বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাস্কর্যটির অবশিষ্টাংশ খুঁজে বের করা চেষ্টা করছেন তারা। পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ন্যক্কারজনক কাজের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। 

স্থানীয়দের দাবি অ্যান্টিক হিসাবে এই পিসটার দাম সম্ভবত মিলিয়ন ডলার হবে। ভেনিসিয়ান মার্বেলের তৈরি একটা ফাউন্টেনের মাঝখানে ভেনাসের একটা লাইফ সাইজ স্ট্যাচু ছিল। ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, শশীলজে অবস্থিত ভেনাস ভাস্কর্যটি প্রাচীন নিদর্শন, এই ভাস্কর্য ময়মনসিংহের শোভা। ভাস্কর্য ভাঙার এমন জঘন্য কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, মহারাজা শশীকান্ত আচার্য্যরে পরিবার মুক্তাগাছা এলাকায় জমিদারি পরিচালনার সময় ১৯০৫ সালে ৯ একর জমিতে শশীলজ নামক দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করেন এর সামনে গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। এর সম্মুখভাগে শ্বেত পাথরের পানির ফোয়ারার মাঝখানে গ্রীক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্যটি দাড়িয়ে ছিল। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশীলজটি অধিগ্রহণ করার পর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  শশীলজের ফোয়ারা   গ্রীক দেবী ভেনাস-ভাস্কর্য   ময়মনসিংহ  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close