ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বৃষ্টিতে-জলাবদ্ধতায় পথচলার আদব
প্রকাশ: রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪, ১:৩১ এএম  (ভিজিট : ২০৮)
বৃষ্টির সময় রাস্তায় চলতে গিয়ে আমরা প্রায় একটা দৃশ্যের সম্মুখীন হই। রাস্তার পাশ দিয়ে বা ফুটপাথ ধরে কেউ একজন হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ করে একটা গাড়ি তাকে ক্রস করে চলে গেল। আর রাস্তা ছিল কিছুটা ভাঙা, সেখানে বৃষ্টির পানি জমে ছিল; সেই পানি চাকার চাপে ছিটকে গিয়ে পথচারীর জামা-কাপড় একদম মাখামাখি। পথচারী হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে যাচ্ছিলেন। কোনো অনুষ্ঠানে বা নামাজ পড়তে অথবা হতে পারে তিনি কোনো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন। কিংবা অফিসে যাচ্ছেন, অফিসে গিয়ে তাকে বসের সঙ্গে দেখা করতে হবে। এখন নিজেকে একটু সেখানে কল্পনা করুন তো কেমন নিদারুণ পরিস্থিতি! যারা গাড়ি চালান, এ ব্যাপারে তাদের সতর্কতা কাম্য।

আমার যেমন অধিকার আছে, আমি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় চলব। তেমনই যিনি হেঁটে যাবেন, তারও অধিকার আছে রাস্তার পাশ দিয়ে বা ফুটপাথ ধরে তিনি হেঁটে যাবেন। আমার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে আমি কারও অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারি না। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে’ (বুখারি : ১০)। অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম মুখ দ্বারা অপর মুসলিমকে কখনো কষ্ট দেয় না। আর হাদিসে যে হাত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, এই হাত শব্দের অর্থ ব্যাপক। 

হাত অর্থ শুধু হাত নয়। শুধু হাতের ক্ষমতাও নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা। সেটা যেকোনো ধরনের ক্ষমতা হতে পারে। প্রকৃত মুসলিমের চিন্তাক্ষমতা, কর্মক্ষমতাসহ সব প্রকার ক্ষমতা থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। বৃষ্টির দিনে আমি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি বা গাড়ি ব্যবহার করছি। আমার গাড়ির চাকার চাপের পানির ছিটা থেকে অপর মুসলিমকে নিরাপদ রাখা প্রকৃত মুসলিমের দায়িত্ব। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে এটা করণীয়ও বটে। আমার এই ক্ষমতা থেকেও অপর মুসলিমকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।

রাস্তায় পানি জমে থাকলে পথচারী চলতে কষ্ট পায়। আমরা চাইলে এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি। রাস্তা থেকে অন্যান্য কষ্টদায়ক জিনিসও সরানোর ব্যবস্থা করতে পারি অথবা নিজে সরিয়ে দিতে পারি। হাদিসে এই কাজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এবং এটাকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানের সত্তরটি শাখা রয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করা। আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া’ (মুসলিম : ৩৫)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়াকে ‘সদকা’ বলে অভিহিত করেছেন। (সিলসিলাতুস সহিহাহ : ৫৭৬)

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া অবশ্যই ভালো কাজ। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গেও এই কাজে অংশ নেওয়া যায়। নিজেদের আশপাশের রাস্তাগুলো মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন রাস্তা সুন্দর হবে, চলাচলে সুবিধা হবে, দেশের কল্যাণ হবে; অন্যদিকে আমাদের ঈমানও মজবুত হবে। নেকির পাল্লাও ভারী হবে।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সৎকাজে ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করো। খারাপ কাজে ও গুনাহের ব্যাপারে সহযোগিতা করো না’ (সুরা মায়েদাহ : ২)। বৃষ্টির দিনে রাস্তায় চলার সময় আমরা একটু বেশিই সতর্ক থাকি। আমাদের গাড়ির চালকদের সতর্ক করি। আমার পথচলা দ্বারা অন্য কারও পথচলা যেন রুদ্ধ না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close