ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কৃষিযন্ত্র বিতরণে অনিয়ম
টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী না হলে মেলে না হারভেস্টার
প্রকাশ: শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪, ৬:২০ এএম  (ভিজিট : ২৪৬)
টাঙ্গাইলে সরকারি ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র (মেশিন) কৃষকদের মাঝে বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে এসব যন্ত্র দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, দালালদের। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির লোকের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এসব কৃষিযন্ত্র। আর এ সবকিছুর মূলে রয়েছেন খোদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। তার স্বাক্ষরেই সরকারের ভর্তুকির টাকা উত্তোলন করতে পারে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এ জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে প্রতি হারভেস্টারে দিতে হয় নগদ ১ লাখ টাকা। তবে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, সারা বাংলাদেশেই একই চিত্র। আমি টাকা নিলে সমস্যা কী। এই টাকাটা কোম্পানি তার মতো অনেককেই অনারিয়াম দিয়ে থাকে।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ভর্তুকিমূলে কৃষিযন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ১৬টি এবং মেইজ শেলার বিতরণ করা হয়েছে ৫টি। এর মধ্যে টাঙ্গাইল পৌর এলাকায়ই ৯টি, ঘারিন্দা ইউনিয়নে তিনটি, গালা ইউনিয়নে তিনটি, করটিয়ায় দুটি, মাহমুদনগরে দুটি, বাঘিল ও ছিলিমপুরে একটি করে মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। তবে এসব মেশিনের বেশিরভাগেরই কোনো হদিস নেই।

এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুন করে টাঙ্গাইলে ১৫ জন কৃষকের মাঝে কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির ১০টি হারভেস্টার, তিনটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও দুটি রিপার বাইন্ডার। এর মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের উত্তর হুগড়া গ্রামের মো. আমিরুল ইসলামকে আদি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের কম্বাইন হারভেস্টার হস্তান্তর করা হয়। এতে সরকারের ভর্র্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাকি টাকা আমিরুলকে পরিশোধ করতে হবে। তবে সরেজমিন আমিরুলের বাড়িতে গিয়ে ওই মেশিনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আমিরুল জানান, মেশিনটি তিনি নেননি বরং তার ভাই নিয়েছেন এবং তার ভাইয়ের কাছেই মেশিনটি রক্ষিত আছে।

এ বছর গালা ইউনিয়নেও চারটি এবং টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় পাঁচটি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গালা ইউনিয়নের সদুল্যাপুর এলাকায় মজনু আহমেদ, রাবনা এলাকার আল আমিন এবং পৌর এলাকার এনায়েতপুরের মো. তোফাজ্জল হোসেন বাবুর নামে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব মেশিনের ভর্তুতি মূল্য দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে সরেজমিন তদন্তে এদের কারও বাড়িতেই রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের হদিস পাওয়া যায়নি। মজনু আহমেদ ও তোফাজ্জল হোসেন বাবু জানান, তাদের কয়েকজন পার্টনার আছেন। তারা চারটি মেশিন পেয়েছেন। এসব মেশিন এনায়েত হোসেন বাবু নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, যারা মেশিনের জন্য আবেদন করেন তাদের মেশিন দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু কেউ মেশিন নিয়ে কাজে লাগান আবার কোম্পানির লোকজন এই মেশিন দিয়ে ব্যবসা করেন। এ নিয়ে অডিট শুরু হলে কোনো কৃষকের বাড়িতে মেশিন না থাকলে কোম্পানির লোকজন ওই কৃষকের বাড়িতে লোবেট ভাড়া করে মেশিন পাঠিয়ে দেন। অডিট চলে গেলে আবার মেশিনটি ফিরিয়ে নিয়ে আসে কোম্পানির লোকজন। বিনিময়ে ওই কৃষককে দেওয়া হয় ৫-১০ হাজার টাকা। আবার এই একই মেশিন শুধু নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করে অন্য কৃষকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অডিট টিমকে দেখানোর জন্য। এভাবেই কুমিরের ছানা দেখানোর মতো একটি মেশিনই বারবার দেখানো হয় অডিট টিমকে।

ভর্তুকিমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য এসিআই মোটরস লিমিটেড, আদি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেটাল এগ্রিটেক লিমিটেড, বাংলা মার্ক, এসকিউ এগ্রিকালচার লিমিটেড ও কৃষিবিদ এগ্রিকালটার লিমিটেডসহ ৩৪ কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর এসব কোম্পানির সঙ্গে কৃষকদের চুক্তি করার আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন কোম্পানির লোকদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন কে কত দেবেন। যে বেশি টাকা দিতে রাজি হবে সেই কোম্পানির মেশিনই সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি রাখা হয়েছে হারভেস্টারসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র। যন্ত্রটি দেখে যে কেউ বুঝবে এটি কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যন্ত্র। কারণ প্রতিটি যন্ত্রের গায়ে লেখা রয়েছে ‘সরকারি উন্নয়ন সহায়তার আওতায় সরবরাহকৃত, হস্তান্তরযোগ্য নহে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোমানা আক্তার জানান, নিয়ম অনুযায়ী 
কৃষকদের মাঝে কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে কৃষকদের মাঝে প্রতি হারভেস্টার বিতরণের সময় কোম্পানির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটি কোম্পানির লোক তাকে অনারিয়াম দেয়। এ ছাড়া সারা বাংলাদেশের একই চিত্র। সবাই টাকা নেয়, আমি নিলে সমস্য কী।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close