ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা
‘কারও কাছে বিচার চাই না’
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ২:৪৫ এএম  (ভিজিট : ২৭২)
আমার ছেলে দোকানে যাইবার কথা বইল্যা গেলো, বাড়িত আইলো লাশ। সে কোনো রাজনীতি করতো না। ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে তার মুখে কোনো কথা কখনো শুনিনি। আমরা তো জানি না কীসের আন্দোলন! কেন পুলিশ গুলি করলো? আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়ায় নিহত জোবায়ের আহমেদের বাবা। জোবায়েরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আলহাজ মৌলভী মো. আবদুল আনোয়ার উদ্দিন। ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার কাওরাট গ্রামে বাড়ির উঠানে বসে তিনি আলাপ করছিলেন।

জোবায়েরের বাবা বলেন, ছেলে মারা গেছে কারও কাছে বিচার চাই না। কিন্তু কষ্ট লাগে এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো খোঁজখবর নেয়নি। রাষ্ট্রের কী কোনো দায়দায়িত্ব নেই। আমরা তো সাহায্য চাই না। সরকার যদি মনে করে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করুক। অনেকেই বলেছে মামলা করতে। আমি বলেছি, না। আমার ছেলে নির্দোষ। কারও সঙ্গে তার বিরোধ বা আক্রোশ নেই। আমি তো আর ছেলেকে ফিরে পাব না। আমি আল্লাহর কাছে ছেলের জন্য জান্নাত চাই।

তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা, আমার ছেলে দোকানে যাওয়ার পথে সে হয়তো বা মনে করেছে তার কিছু হবে না। সে তো আন্দোলনকারী নয়। কিন্তু পুলিশ তাকে আন্দোলনকারী ভেবে গুলি করেছে। তার যাওয়াটাই কাল হলো। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমার ছেলেকে জান্নাতবাসী করবেন এটিই আমার কামনা।

তিনি জানান, গৌরীপুর ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস করে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করার পর জোবায়ের ব্যবসা শুরু করে। ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জে তার মোবাইলের দোকান রয়েছে। ভারত থেকে মোবাইল ডিসপ্লেসহ খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করত। বসবাস করত গ্রামের বাড়িতেই। ১৩ মাস আগে বিয়ে করেছিল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিপঁচাশি গ্রামের মার্জিনাকে। দুদিন আগে বিধবা স্ত্রীকে বাপের বাড়ি নিয়ে গেছে তার বাবা। যাওয়ার সময় পুত্রবধূ শুধু কান্না করেছে। কিছু বলে যায়নি।

তিনি বলেন, জানি না ওর ভাগ্যে কী আছে! ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বসতঘরে শেষবারের মতো কথা হয় ছেলের সঙ্গে। জোবায়ের জানায়, আজকে দোকানে যাবে। অনেক দিন ধরে দোকান খোলা হয় না। অনেক কাস্টমার ঘুরে যাচ্ছে। এরপর আমি দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। জোহরের নামাজের সময় একটা ফোন আসে। বলে, জোবায়ের গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার এক বন্ধু মোবাইলে ফোন করে জানায় জোবায়ের মারা গেছে। বেলা ৩টার দিকে তিনজন মেয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সে জোবায়েরের মরদেহ নিয়ে বাড়ি আসে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয়। মরদেহ রেখে অ্যাম্বুলেন্স চলে যায়। রাত ৮টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আমার ছেলেকে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close