ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

যুগ পেরিয়ে বাঁশখালীতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা
দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকায় জড়াচ্ছেন অপকর্মের সিন্ডিকেটে
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪, ১:৫১ এএম  (ভিজিট : ২৮৪)
বাঁশখালীতে উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে দীর্ঘদিন ধরে বদলি না হওয়া পুরোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের মামলায় ১০-১২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করার পর বিষয়টি নজরে আসে।

এ বিষয়ে বাঁশখালীর বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, বাঁশখালীতে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাঁশখালীতে চাকরি করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরে রাখা হচ্ছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, আমি দুর্নীতি কিংবা অসৎ পথে বিরানি খাওয়ার চেয়ে সৎ পথে আলুভর্তা খেতে ভালোবাসি। কোনো দুর্নীতি অনিয়ম আমি সহ্য করব না। কাউকে প্রশ্রয়ও দেব না। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তে যা আসে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, খানখানাবাদ ইউনিয়নে চাল আত্মসাতের ঘটনায় মামলার পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে মামলা মোকাবিলার বিষয় নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈঠককারী কর্মকর্তাদের হতাশ করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মামলার বিষয়ে তদন্তে যা আসে তাই হবে। কোনো অপরাধীর দায়ভার উপজেলা প্রশাসন বহন করবে না। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের তদবিরও চলবে না। ইউএনও জেসমিন আক্তারের স্পষ্ট ঘোষণার পর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন আতঙ্কে ভুগছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বাঁশখালীতে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন। অভিযোগ আছে, আনিসুজ্জামানকে ম্যানেজ করতে পারলে পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি, পাহাড়ি সেগুন কাঠ পাচার ও পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করা যায়। শুধু আনিসুজ্জামান নয়, মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী লিপটন ওম ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন বাঁশখালীতে। একই পদে একই স্টেশনে চাকরি করে এই কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া লিপটন ওম রাউজানে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। 

এদিকে বিগত চার বছর ধরে বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদটি শূন্য। লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁশখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও অঘোষিতভাবে লিপটন ওমই যেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা! সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একই স্টেশনে লাগাতার তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনে বিধিনিষেধ থাকলেও লিপটন ওম ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে আছেন বাঁশখালীতে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা না থাকার সুযোগে লোহাগাড়া উপজেলার দায়িত্বরত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাওন ভূঁইয়া বাঁশখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে থাকলেও পিআইও অফিসের সব কাজই চলে লিপটন ওমের মর্জিতে। 

পুরোনো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁশখালীতে একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করার কারণে তারা নানা ফাঁকফোকর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। যার কারণে সহজে বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন অনেক কর্মকর্তা। যথাযথ তদারকির অভাবে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, বাঁশখালীতে বহু সরকারি কর্মকর্তা অনেক বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। অনেকে ১০-১২ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ঘুরে ফিরে বাঁশখালীতেই চাকরি করছেন। বলতে গেলে অনেকের ঘরবাড়ি যেন বাঁশখালী! দীর্ঘদিন চাকরি করার সুযোগে তাদের অনেকেই এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই উপজেলা প্রশাসনের তথ্য আগাম ফাঁস করে দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধি ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতার কাছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো বন বিভাগেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। যুগের পর যুগ বাঁশখালীতে দায়িত্ব পালন করে অনেকেই বন রক্ষার চেয়ে বন গিলে খাওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগী হয়েছেন। 

বাঁশখালীর নতুন এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও এখনও অনেক কর্মকর্তা সতর্ক না হয়ে পুরোনো অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত আছেন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close