কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দুষ্কৃতকারীদের সহিংস তাণ্ডবে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ আন্দোলন ঘিরে সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থাকে অনুরোধ জানিয়েছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
রোববার (২৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগর ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, সচিব জয়শ্রী রানী রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা রাত ১২টা পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীরা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত মূল্যবান সম্পদের ধ্বংস সাধন করে। ভাঙচুর, ক্ষতিগ্রস্ত ও লুটপাটকৃত মালামালের মধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপিত ক্যামেরাসমূহের মধ্যে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, নগরজুড়ে আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল, তিনটি এলইডি টিভি, নগর ভবনের প্রধান প্রবেশ ফটকে স্থাপিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ দুপাশে স্থাপিত চারটি সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবনের জানালার থাই গ্লাস, প্রধান ফটকের দুই পাশে অবস্থিত গার্ডেন লাইটসমূহ, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া নগর ভবনের সামনে সামনে থেকে লালবাগ রেল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার মাঝখানে, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ফুট ওভার ব্রিজের নিচের দুইপাশে অবস্থিত ডিভাইডার প্রটেকশন গ্রিল এবং শাপলা চত্বরের গোল চত্বরের গ্রিলসমূহ, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে স্থাপিত ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দুইটি এলইডি সাইনসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
মেয়র আরও বলেন, দুষ্কৃতকারীদের হাতে থাকা লোহার রড, এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল দ্বারা ভাঙচুর আরম্ভ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দুষ্কৃতকারীদের মারমুখী আচরণে নিরাপত্তাকর্মীরা পিছু হটলে তারা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এসব ঘটনায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যে সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তা নিন্দনীয় দাবি করে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থাকে অনুরোধ করেন তিনি।
মেয়র সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সুযোগে দুর্বৃত্তরা নাশকতা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। প্রতিবাদী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে এসব সহিংস ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
গত দুই সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ জানমালের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তা অপূরণীয়। এই সহিংসতায় যারা সরাসরি সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এই বিষয়ে সহযোগিতা আশ্বাস দেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ রংপুর মহানগরসহ জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এরই রেশ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করা দুষ্কৃতকারীরা গত ১৮ ও ১৯ জুলাই রংপুরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এতে সবমিলিয়ে ২০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান।
সময়ের আলো/আরআই