ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বেতনা নদী খননে অনিয়মের অভিযোগ
১০ মাসের প্রকল্পে তিন বছর শেষ, কাজ হয়নি অর্ধেকও
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ৯:৩৭ পিএম  (ভিজিট : ১৯০)
নদী খনন করে পাড়েই মাটি রাখা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টিতে মাটি আবার নদীতে যাচ্ছে। ছবি: সময়ের আলো

নদী খনন করে পাড়েই মাটি রাখা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টিতে মাটি আবার নদীতে যাচ্ছে। ছবি: সময়ের আলো

সাতক্ষীরায় বেতনা নদী খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১০ মাসের প্রকল্প তিন বছরেও অর্ধেক কাজ হয়নি। দায়সারা ভাবে নদী খনন করে মাটি কেটে রাখা হচ্ছে নদীর পাড়েই। ফলে বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে। ফলে নদী খননের কোটি কোটি টাকা কারচুপি করে হাতিয়ে নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তাসহ একটি প্রভাবশালী চক্র।

ভৈরবের একটি শাখা নদী বেতনা। যার আদি নাম বেত্রাবতী। যশোর থেকে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে এটি। কলারোয়া পৌরসভার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বিনেরপোতা হয়ে পূর্ব-দক্ষিণের বুধহাটা হয়ে আশাশুনির চাপড়ার কাছে মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে বেতনা নদী।

এক সময় সাতক্ষীরার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে পরিচিত ছিল এই বেতনা নদী। এক সময়ের প্রমত্তা এই নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সাতক্ষীরা পৌরসভা, ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ইউনিয়নের ২২ গ্রামের মানুষ বছরের ছয় মাস পানিবন্দি থাকে। জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে ফসল হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, একেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন রকম দায়সারাভাবে কিছুদিন কাজ করে টাকা নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে আসে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হওয়ায় কাজ হচ্ছে খুবই নিস্মমানের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজের অনুকূলে ৪৮ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

নদীর পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদীটির খনন শুরু হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না বলে মনে করেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, নদীর তলদেশ ও নদীর দৈর্ঘ্য ঠিকমত কাটা হচ্ছে না। আর মাটি কেটে রাখা হচ্ছে নদীর পাড়েই। ফলে বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার ২০২১ সালে ৪৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এরমধ্যে বেতনা নদীর ৪৪ কিলোমিটার খনন করার কথা। তিনটি প্যাকেজে ২৩ কিলোমিটার নদীর খনন কাজের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ব্যাপক অনিয়মও দুর্নীতির মধ্যে খনন কাজ শুরু হলও কোন কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।
এরমধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার হাজিপুর থেকে কলারোয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদকে ২০২২ সালের ৩০ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১০ মাস মেয়াদি প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২১ জুন। ১০ মাসের পরিবর্তে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গায় বেতনা নদীর খননকাজ করছে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিজে না করে সাতক্ষীরার আক্কাস আলী নামে এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আক্কাস আলী কাজটি করতে সময়ক্ষেপণ করছিলেন। এক পর্যায়ে খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের কাছে হস্তান্তর করেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমরা কাজটি নিয়েছি কিছুদিন হলো। এর আগে আক্কাস আলী নামে এক ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তবে তিনি কাজ রেখে চলে যান। পরবর্তী সময়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দায়িত্বে দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শেষ করব বলে আশা করছি।

ঝাউডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, প্রকল্পের কাজ এক টানা হচ্ছে না। এক ঠিকাদার কিছুদিন করার পর চলে যান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হচ্ছে। বেতনা নদী যেভাবে খনন হচ্ছে তাতে খুব উপকারে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ছে। মূল নদীর অর্ধেকও খনন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরার আক্কাস আলীকে দিয়ে আমি ভুল করেছি। তিনি কাজটি নিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেছেন। পরবর্তী সময়ে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজকে কাজটি দেয়া হয়েছে। তারা খননকাজ দ্রুত করছে। তাছাড়া শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি অল্পদিন সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। বেতনা নদী পুনঃখননে কোনো অনিয়ম মানা হবে না। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হয়েছে। কাজের অনুকূলে এখন পর্যন্ত ঠিকাদারকে ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিল দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারের কাছ থেকে শিডিউল অনুযায়ী বুঝে নেয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে মূল ঠিকাদার কাজ হস্তান্তর করতে পারেন কিনা সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভৈরব নদী-বেতনা নদী   প্রকল্পে অনিয়ম-অভিযোগ   সাতক্ষীরা   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close