ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দুর্ভোগের আরেক নাম ‘সীমান্ত সড়ক’
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪, ২:৩৭ এএম  (ভিজিট : ২৯৬)
নির্মাণের সাত বছর পেরিয়ে গেছে। এই সাত বছরে শেরপুরের তিন উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়কের এখন বেহাল দশা। গত ৭ বছরে অতিরিক্ত লোড, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে পুরো সড়ক ভরে গেছে খানাখন্দে। কোথাও সড়কের একপাশ ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি আর বর্ষায় কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে যায় সড়ক। ইট, পাথর আর পিচ উঠে সীমান্ত সড়ক এখন দুর্ভোগের আরেক নাম।

এই সড়কে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে সড়কের বড় বড় গর্তে পানি জমে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। সম্প্রতি শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়কের ২৩ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে সড়ক সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু সংস্কার কাজ শুরু হতে না হতেই সড়ক থেকে উঠে যাচ্ছে পাথর, তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট গর্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের কারণেই এমনটা ঘটছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ থেকে রৌমারী পর্যন্ত ১৭১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২০১৭ সালে শেরপুর জেলায় ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কটি নির্মাণের পর সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটে। শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ‘ময়মনসিংহ- শেরপুর- জামালপুর (ধানুয়া কামালপুর) সীমান্ত সড়ক’ নামে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর পেরিয়ে গেছে ৭ বছর।  

২৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট (এসবিএসটি) এবং বাকি ১৭ কিলোমিটার ড্যান্স বিটুমিনাস সারফেসিং (ডিবিএস) করা হচ্ছে। ৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য নূর জামাল ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ কোটি টাকায় এবং ১৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কাজের মান নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে ৬ কিলোমিটার এসবিএসটি কাজের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, কাজের এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে উঠে যাচ্ছে পাথর। সৃষ্টি হচ্ছে ছোট ছোট গর্তের। ধসে যাচ্ছে সড়কের একাংশ। অনেক স্থানে দেবে গেছে সড়ক। ফলে উঁচু-নিচু রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ঝাঁকুনিতে বিকল হচ্ছে যানবাহনের ইঞ্জিন, কমে যাচ্ছে যানবাহনের আয়ু। পাশাপাশি এই সড়কে চলাচলকারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।  

সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুরনো সড়কের উপর নতুন করে সারফেস ট্রিটমেন্ট করার আগে পুরোনো সড়ক ভালো করে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও ঝাড়ু ও ব্রাশ দিয়ে কোনোমতে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে লেগে থাকা ধুলোবালির ওপর সারফেস ট্রিটমেন্ট স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। সংস্কারের এক সপ্তাহের মধ্যেই উঠতে শুরু করেছে সারফেস ট্রিটমেন্ট।

কথা হয় নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউপি সদস্য হযরত আলীর সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এই সীমান্ত সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এরপর তা আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে সড়কটির কিছু অংশে সংস্কার শুরু হলেও তার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সড়ক সংস্কার করার জন্য যে পাথর ফেলা হয়েছে তা অনর্থক। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই অনেক পাথর উঠে যাচ্ছে। অনেক স্থানে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হচ্ছে। অটোরিকশাচালক খুররম মিয়া বলেন, এই পাথরে গাড়ির ক্ষতি হয়। তাছাড়া গাড়ি চলাচলের সময় পাথর ছিটকে এসে শরীর লাগে। অনেক সময় কারও কারও চোখেও লাগে। গাড়ির চাকা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। তাছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে থাকা উঁচু-নিচু অংশ ঠিক করা হয়নি। ফলে এই সড়কে চলতে গেলে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেতে হয় সবসময়।

হযরত আলী, সাদ্দাম ও খুররমের মতো স্থানীয় আরও অনেকেই অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। ভাঙাচোরা সড়কে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। দুর্ভোগের পাশাপাশি যাতায়াতে সময়ও লাগছে বেশি। পুরো সড়কটি দ্রুত ভালোভাবে মেরামত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে সড়কের যে অংশে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে সেখানে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী না দিয়েই কোনোরকমে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে। এ কারণে সংস্কারকাজের মান ভালো হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে জানার জন্য শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় পুরো সড়কটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত ২৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সড়কের বাকি অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করতে বলেন শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম। এছাড়া এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো বিল্ডার্সের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close