কোটা বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিসহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লকেড কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে একই সময়ে গত ১১ জুলাই আন্দোলনে পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীরা ব্যর্থ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অপসারণ চেয়ে প্রক্টর অফিসে তালা দিতে ব্যস্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের একাংশ (এনায়েত উল্লাহ গ্রুপ)। তবে এই গ্রুপের নেতা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ জানান, নির্দিষ্ট কোন গ্রুপ নয়। তিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ১১ জুলাইয়ের ঘটনায় প্রক্টরকে ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তালা দিয়েছে।
রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ১১টায় এনায়েত উল্লাহর গ্রুপের কর্মী বলে পরিচিত ২৫-৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে স্লোগান দিতে দিতে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত প্রক্টর অফিস তালা দেন। অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থকরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য যাচ্ছিল।
সকাল সাড়ে ১১টায় বৈষম্য বিরোধী, কুবি শাখার আন্দোলনকারীরা কুমিল্লা শহরের পূবালী চত্বরে জড়ো হয়ে গণ-পদযাত্রার মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পূবালী চত্বরে মহানগর ছাত্রলীগের শানফি সমাবেশ থাকায় আন্দোলনকারীরা কুমিল্লার সদরের পুলিশ লাইন্স থেকে গণ-পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়। সেখানে তারা দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিটে স্মারকলিপি প্রদান করে।
এসময় জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু মোহাম্মদ রায়হান জানান, ১১ জুলাই প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তারা এখনো পুলিশ প্রশাসনের সাথে কাছে এই হামলার বিচার চান এবং কোটা পদ্ধতির সংস্কার চান। এখানে প্রক্টর পদত্যাগের কোন বিষয়ে তারা নেই। ছাত্রলীগের যারা আছেন তারাও আমাদের ভাই। আশা করি তারা বিষয়টা বুঝবেন।
এছাড়া আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য আসছিলাম। ক্যাম্পাসে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। আমরা ক্যাম্পাসে গেলে বুঝতে পারবো।
প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া এনায়েত উল্লাহর অনুসারী রবিন দাশ বলেন, প্রক্টরের কাজ আমাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু ঐদিন উনার সামনে আমার ভাইয়েরা হামলার স্বীকার হয়েছে। এইজন্য আমরা এই প্রক্টরের অপসারণ চাই। এর আগেও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিলো। এটা আমরা কোটা আন্দোলনের থেকে করছি না ছাত্রলীগ আন্দোলন থেকে করেছি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের আগামী কমিটির পদ প্রত্যাশী এনায়েত উল্লাহ বলেন, আজ প্রক্টর অফিসে তালা দিয়েছে সেখানে তিন হল এর আবাসিক শিক্ষার্থী মিলে দিয়েছে। এটা কোনো একক হল এর নেতৃত্বে দেওয়া হয় নাই। এটা ছাত্রলীগের কোনো অংশ না, এছাড়া কোটা আন্দোলনের সাথে এটার সম্পৃক্ততা নেই বরং ঐদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে তারা আজ প্রক্টর অফিসে তালা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, কে কারা তালা দিয়েছে আমরা এখনও সঠিক বলতে পারছি না। তবে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন যারা করছে তারা যে যৌক্তিক আন্দোলন করছে তাদের এখানে কেউ ছিলো না।
স্মারকলিপি গ্রহণের বিষয় কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী এবং তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি আমি গ্রহণ করেছি। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এটা পৌঁছে দিব।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি চার্জ করে পুলিশ। এর জবাবে শিক্ষার্থীরাও ইট-পাথর নিক্ষেপ করেন। পরবর্তীতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, টিয়ারশেল, ফাঁকা গুলি ছুড়েন। ফলে তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে বিকেল ৪ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
সময়ের আলো/আরআই