ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়
প্রকাশ: রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ৩:০২ এএম  (ভিজিট : ৭১৬)
বৈশ্বিক ডিজিটাল সূচকে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে। আইসিটি অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এই স্কোর অনেক সম-অর্থনীতির চেয়ে কম। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, বৈশ্বিক গড় স্কোর ৭৪ দশমিক ৮। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর ৬৪ দশমিক ৮।

সূচকে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।সূচকে বৈশ্বিক গড় ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর দুটোতেই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে কেবল পাকিস্তান। সূচকে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

দশটি সূচকের মধ্যে সাতটিতেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোরের চেয়ে বাংলাদেশের স্কোর কম। তবে বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজে (থ্রিজি এবং ফোরজি) ভালো করেছে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাবস্ক্রিপশনে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় সূচককে ছাড়িয়ে গেছে। তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এখনও পিছিয়ে আছে।  

এই প্রতিবেদন আমলে নিলে এটা সহজেই প্রতীয়মান হয় বিপুল বিনিয়োগের পরও তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। ইন্টারনেটের গতি ও ব্যবহার, ডিজিটাল জীবনমান, প্রযুক্তির ব্যবহার, ই-গভর্নমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা, ফ্রিল্যান্সিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রায় সব বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার তলানিতে। অনেক সূচকে পাশের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান থেকেও পিছিয়ে। ফলে ঘোষণা দিয়ে দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হলেও জীবনমান সেভাবে ডিজিটাল হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও তা খরচ হয়েছে অপরিকল্পিত। দেশজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শুধু ডিজিটাল অবকাঠামো। টেকসই নীতিমালার আলোকে পরিকল্পিত ডিজিটালাইজেশন হয়নি। ফলে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছেছে ঠিকই, কিন্তু ডিজিটাল সেবার দরজা প্রশস্ত হয়নি।

জানা গেছে, দেশের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে এবং এ বিষয়ে দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ২০১০ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প শেষ হয়েছে, কিছু চলমান। অবকাঠামো খাতে ১৯ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামো গড়ে তুলতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুল বিনিয়োগের পরও অপরিকল্পিত উদ্যোগ ও অব্যবস্থাপনায় নাগরিক জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব সেভাবে ঘটেনি। ডিজিটাল খাতে সরকারের অন্যতম সাফল্য তথ্য বাতায়নের আওতায় প্রায় ৫০ হাজার ওয়েবসাইট তৈরি। যদিও এসব ওয়েবসাইটে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। প্রায় নিয়মিত সাইবার হামলা হচ্ছে সাইটগুলোতে। এতে বেহাত হচ্ছে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির এ বিষয়ে বলেছেন, দেশে ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে উঠলেও প্রযুক্তি খাতের সঠিক বিকাশ হয়নি। দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা যায়নি। ফলে এ খাতে টেকসই উন্নয়ন ঘটেনি। তাই সূচকগুলোতে সবসময় বাংলাদেশ পেছনের দিকে থাকছে।

ডিজিটাল সূচকে ভুটানেরও নিচে অবস্থান করা বাংলাদেশ ইন্টারনেট গতির তালিকায়ও তলানিতে রয়েছে। ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্সেও  গত মে মাসে মোবাইল ইন্টারনেট সূচকে ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৯-এ। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৮তম। আর এআই প্রস্তুতি সূচকেও যে পিছিয়ে ছিল তা নিয়ে দৈনিক সময়ের আলোতে গত ৭ জুলাই ‘এআই প্রস্তুতির সূচকে তলানিতে বাংলাদেশ’ শিরোনামে বিস্তারিত খবর ছাপা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রস্তুতি সূচকে (এআইপিআই) বিশ্বের ১৭৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম।

এমনকি নিচের দিকে ডিজিটাল জীবনমানও। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশ ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করেছে। কিন্তু ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১২১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৮২তম অবস্থানে। এশিয়ার ৩২ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৫। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স-২০২৩ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে। তালিকায় ভারত ৫২তম অবস্থানে এবং পাকিস্তান ৯৩তম। ইন্টারনেট সামর্থ্য, ইন্টারনেটের মান, ই-অবকাঠামো, ই-নিরাপত্তা, ই-সরকার; পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি করা হয়। 

প্রতিবেদন বলছে, সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। বৈশ্বিক গড় ৫৩ এমবিপিএস হলেও বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট গড় গতি ২০ এমবিপিএস। ই-গভর্নমেন্ট সূচকে বাংলাদেশ তালিকার ৭৩ এ, যা বৈশ্বিক গড়মানের নিচে। ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৭তম; ই-সিকিউরিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৫তম। 

এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন সাময়িকী সিইও ওয়ার্ল্ড গত এপ্রিলে ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য সেরা গন্তব্যের ৩০  দেশের তালিকা প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশ রয়েছে ২৯তম স্থানে। তালিকায় ভারত রয়েছে দ্বিতীয়, পাকিস্তান ২৮তম স্থানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম থাকায় ভালো কাজ দেশে আসে কম। যদিও ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকেই।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close