ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

বর্ষাকাল বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ৬:২৬ এএম  (ভিজিট : ৩৫০)
চলতি বছর প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সময় সবাই গাছ লাগানোর বিষয়ে সরব হয়ে উঠেছিলেন। অনেকেই ওই তাপপ্রবাহের মধ্যেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছিলেন। চারদিকে রব উঠেছিল বৃক্ষরোপণের। কিন্তু সেটি কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা সময়ই হয়তো বলে দেবে। কেননা আমরা জানি, সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা, বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ স্লোগানটি বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত একটি স্লোগান। প্রতি বছরই এ সেøাগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃতিপ্রেমীরা গাছের চারা রোপণ করেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেন। এ বছর তাপদাহের জন্য বনাঞ্চল ধ্বংস, কল-কারখানা স্থাপন, ঘনবসতি এবং গাছ কেটে ফেলাকে দায়ী করা হয়। ফলে নতুন করে গাছের চারা রোপণে জোর দেওয়া হয়। রাস্তার পাশে, খালি জায়গা বা পতিত জমিতে গাছ লাগানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

একই সঙ্গে ভবনের ছাদে বাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন পরিবেশবিদরা। কেননা ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে। বাগানসহ ছাদের তাপমাত্রা ও বাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অব্যবহৃত ছাদে সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাকসবজির বাগান তৈরি করা হয়। এতে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাকসবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা যায়।

এখন কথা হচ্ছে, গাছের চারা কখন লাগাতে হবে? যখন-তখন রোপণ করলেই কি সুফল মিলবে? তার সম্ভাবনা খুবই কম। মূলত চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রথমেই উপযুক্ত সময় বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া গরু-ছাগল বা অন্য তৃণভোজী প্রাণীর হাত থেকে চারাকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা রোগাক্রান্ত হলে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় বনকর্মী বা কৃষিকর্মীর পরামর্শ নিতে হবে।

অন্যদিকে গাছের চারা লাগানোর পর প্রয়োজনীয় সার দেওয়া জরুরি। উপযুক্ত পরিচর্যাও করতে হয়। সঠিকভাবে চারা বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। 

প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত আলো-বাতাসে গাছ দ্রুত বাড়ে। যেকোনো জাতের গাছের জন্য এটি খুবই জরুরি। তাই বাড়িতে এমন স্থানে গাছ লাগাতে হবে বা রাখতে হবে; যেখানে নিয়মিত আলো-বাতাস পাওয়া যায়।
যেহেতু যেকোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা জরুরি। আমাদের জাতীয় সংসদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি আছে বলে জানিয়েছেন। তাই আমাদের বনভূমিকে আরও বাড়াতে হবে। এটি খুবই জরুরি একটি বিষয়। এর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ফলে দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ি বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম এবং ফলদ বৃক্ষমেলার আয়োজন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করা হয় বর্ষাকালকে। তবে রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারা বছরই ‘চারা-কলম’ লাগানো যায় বলে জানিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস। তারপরও বর্ষাকালই উপযুক্ত সময় বলে বিবেচনা করা হয়। তাই বলা হয়, যেকোনো গাছের চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময় দিনের শেষভাগে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকাল। সুতরাং সময়-সুযোগ বুঝেই গাছের চারা রোপণ করা উচিত। অসময়ে চারা রোপণ করে গাছের মৃত্যু ডেকে আনা কাম্য নয়। এক্ষেত্রে গাছ নির্বাচনও করতে হবে স্থান ও পরিবেশ বুঝে। সব গাছ সব জায়গায় বা পরিবেশে মানানসই নয়। যেমন-যে গাছে পাখি বসে না, বাসা বাঁধে না; সেসব গাছ লাগাতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে ফুল গাছ লাগাতে পারেন। আবার ফলদ গাছ হলে তা পাখিসহ অন্য প্রাণীর জন্যও আশ্রয় ও খাবারের উৎস হতে পারে। তবে আম-জাম-লিচু-কাঁঠালের পাশাপাশি কড়ই, শালের মতো গাছও ছায়া দেয়। এগুলো বাঁচেও দীর্ঘদিন। এরা গরমে যেমন প্রশান্তি দিতে পারে; তেমনই দীর্ঘদিন অক্সিজেন সরবরাহও করতে পারে। ফলে স্থান বুঝে গাছ নির্বাচন করতে হবে।

মূল কথা হচ্ছে, অঞ্চলভেদে গাছের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন-মধুপুর বা ভাওয়াল এলাকায় শাল গাছের উপস্থিতি বেশি। এ ছাড়া রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, শিশু, বাবলা ও ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গা দরকার। এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুত বেশি পুষ্টি মাটি থেকে শুষে নেয়। তাদের সঙ্গে অন্য গাছ বাঁচতে পারে না। ফলে এভাবে যেন জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এমনকি ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত দিক বিবেচনায় রাখা জরুরি। তাই আসুন, এই বর্ষায় বেশি বেশি গাছের চারা রোপণ করি। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। অতিরিক্ত তাপ প্রতিরোধে প্রত্যেকেই এগিয়ে আসি। এ বছর আশানুরূপ গাছের চারা লাগাতে পারলে হয়তো ভবিষ্যতে তাপদাহ থেকে মুক্তি পাব। পরিবেশ হবে শীতল। দেশ হবে সবুজে সবুজময়।


গণমাধ্যমকর্মী

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close