ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আপিল বিভাগের আদেশের পর কোটা বিরোধী আন্দোলন কতটা যৌক্তিক
প্রকাশ: বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪, ৯:০৯ পিএম আপডেট: ১০.০৭.২০২৪ ১১:২৮ পিএম  (ভিজিট : ৯০৪)
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিল চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। বুধবার সকাল ১০টা থেকে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে আদালতে লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। এই আদেশের পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কতটা যুক্তিযুক্ত বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই আন্দোলনে একদিকে যেমন চরম জনভোগান্তি হচ্ছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১০ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মীর আবদুস সবুর। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় তিনি আন্দোলনকারীদের রোষানলে পড়েন। অনেক আকুতি-মিনতির পর কোনোরকমে ব্যারিকেড থেকে পার পান। 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের নামে এসব কী হচ্ছে। রোগীরাও যদি নিরাপদে হাসপাতালে না যেতে পারে, তা হলে এটা কেমন আন্দোলন। 

বেসরকারি চাকরিজীবী শাহ সামসুল হক বলেন, অফিস থেকে বের হয়ে কোনো দিগ্বিদিক পাচ্ছি না। যেখানেই যাই সেখানেই ভোগান্তি। বাসায় শিশু মেয়েকে একা রেখে স্বামী-স্ত্রী কর্মস্থলে এসেছি। এখন গাড়ি না থাকায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। না জানি মেয়েটা কেমন আছে। একটি গাড়িকেও চলতে দিচ্ছে না। 

তিনি বলেন, আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তারপরও কেন রাস্তায় এভাবে সব আটকে রেখে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে তারা!

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার বিকালে সময়ের আলোকে বলেন, আদালতের আদেশের পরও তারা ঢাকা অচল করে দিয়েছে। সারা দেশের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এর নেপথ্যে কেউ না কেউ উসকানি দিচ্ছে। তবে আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি।

এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, জনদুর্ভোগ ও সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে কি না এবং আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। 

তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের বোঝা উচিত যেহেতু আদালত একটি আদেশ দিয়েছেন সেই আদেশকে মান্য করা। তাদের দাবিগুলো আদালতে তুলে ধরলে অবশ্যই আদালত তাদের কথা শুনবেন। জনদুর্ভোগ বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে কখনই সমাধান আসে না। 

তিনি আরও বলেন, এর পেছনে কেউ না কেউ উসকানি দিচ্ছে। যদি দিয়েই থাকে তা হলে অবশ্যই তাকে খুঁজে বের করা হবে। 

আন্দোলন প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বুধবার দুপুরে সময়ের আলোকে বলেন, আন্দোলনের নামে কেউ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাক, এটা কাম্য নয়। তবে অবনতি ঘটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা দেশের পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আপিল বিভাগের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুনেছি। আমাদের কাছে নির্দেশনা এলে সে হিসেবে আমরা কাজ করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বুধবার সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন করা ও স্থগিত করা নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বুধবার আপিল বিভাগ আগামী এক মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ফলে আগামী এক মাসে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও কোটার কথা উল্লেখ থাকবে না। ফলে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের যে দাবি ছিল সেটি পূরণ হয়েছে। যদিও এটা স্থায়ী সমাধানে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আদালতে যে আলোচনা হয়েছে, সে সুযোগে ছাত্রছাত্রীরা আদালতে সেগুলো তুলে ধরতে পারবে। যদি ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন স্থগিত রাখে তা হলে জনভোগান্তি হ্রাস পায় এবং তাদের অর্জনের দিকে এগিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করলে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা এরকম না।

ঢাবির সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, ছাত্রছাত্রীরা আদালতে মতামত তুলে ধরলে আদালতের জন্য সুবিধা হবে। তাদের জন্যও সুবিধা হবে।

নেপথ্যে কারও ইন্ধন থাকতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সেটা মনে করতে চাই না। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এমএ বারি সময়ের আলোকে বলেন, দেশের জন্য যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বহাল রেখে অন্যান্য কোটা বাতিল করা উচিত। ধারাবাহিক আন্দোলন চলাকালে আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেই রায়ের প্রতিও আন্দোলনকারীদের সম্মান রাখা জরুরি। কারণ আদালত যেহেতু এক মাসের সময় নিয়েছে, সেটি অবশ্যই এই আন্দোলনের ফল। এক পর্যায়ে তাদের দাবি মেনেও নেওয়া হবে হয়তো। তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে আন্দোলনের নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনভোগান্তি কোনোভাবে কাম্য নয়।

সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন আদালত। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close