কুড়িগ্রামে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩.৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১.০৮ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯.৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যার পানি উঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবরিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারি ভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারি ভাবে তেমন ত্রাণ সহায়তা দেখা যায়নি।
জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমেদ বলেন, গত ৭দিন ধরে আমার চরের সব বাড়িতে পানি। গরু ছাগল হাস মুরগী নিয়ে পাশের উঁচু একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। চাল নেই, চুলা নেই। ভীষণ কষ্টে দিন পার করছি। স্কুল শিক্ষার্থী মিম, মরিয়ম ও হাসান জানায়, ৭দিন থেকে রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে। বিদ্যালয়ে এক হাঁটু জল। কবে পানি নামবে। তারপর হয়তো স্কুলে যাবো।
অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম জানান, চারিদিকে পানি আর পানি। বিদ্যালয়ের আশপাশের রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর কোন সুযোগ নেই। সদরের আশরাফিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বন্যার পানিতে চতুর্দিকে তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের চলার পরও ভেঙ্গে গেছে। স্কুলে পানি। সব কিছু বিবেচনায় শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে গত বুধবার (৩ জুলাই) থেকে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, ৯ উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি। এর মধ্যে সাময়িক পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০টি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শামসুল আলম জানান, বন্যার পানিতে রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় ১২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বন্যার আওতার বাইরে সে সব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে না।
জেলা সিভিলে সার্জন ডাঃ মন্জুর এ মোর্শেদ বলেন, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে বন্যা কবলিত এলাকায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবেলায় ৩শ ১৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ সাইদুল আরিফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোথায়ও কোন থাকলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিবো।
সময়ের আলো/এএ/