ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

স্কুল সংস্কারে অনিয়ম ধরতে ছুটে গেলেন স্থানীয় এমপি
প্রকাশ: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ৬:০১ পিএম  (ভিজিট : ২৯২)
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে সেই অনিয়ম ধরতে বিদ্যালয়ে নিজেই ছুটে গেলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে বিদ্যালয়ের অনিয়ম দেখতে যান পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ। পরে সেখানে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মোহনপুর এলজিইডি অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কাজ পান রাজশাহীর মেসার্স আলখাল্লা এন্টারপ্রাইজ। তারা গোপনে রাতারাতি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজশে সামান্য কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তুলে নিয়েছেন বিল। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেসার্স আলখাল্লাকে দেওয়া টাইলস, রং, থাই গ্লাস ও স্টেজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই কাজেও করেছেন ব্যাপক অনিয়ম। উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নিজেই একজন লাইসেন্স ধারী ঠিকাদার। ঠিকাদারের কারণে কন্ট্রাকটারের সাথে যোগসাজশে “এ” গ্রেড টাইলস না দিয়ে “সি” গ্রেড টাইলস দিয়ে রাতে কাজ সম্পূর্ন করেছেন। সি গ্রেডের টাইলসের ফেলে দেয়া সেই প্যাকেট প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও ৬টি দরজা না দিয়ে মাত্র ১টি দরজা লাগিয়েছেন। ১০টি ফ্যান না দিয়ে মাত্র ২টি ফ্যান দিয়েছে। রুমের ভিতরে প্লাস্টিক পেইন্ট রং না দিয়ে ডিসটেম্পার রং করেছেন। ছাদের নিচে সিলার না করে চুনকাম রং করেছে। বিল্ডিং এর বাহিরের রংগুলো ওয়েদার কোট না দিয়ে সাধারণ রং করেছে। পিছনের অনেক জানালার ভাঙ্গা গ্লাস মেরামত না করেই কাজ বুঝিয়া পেয়েছি বলে স্বাক্ষর (এনওসি) প্রদান করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। 

এরপর তিন মাস না যেতেই ঠিকাদারের রং নষ্ট হয়ে গেছে। দেওয়ালে ধরেছে ময়লা। ময়লার উপরেও দেয়া হয়েছে রং। এছাড়াও মূল গেটে রং করার কথা থাকলেও সেটিও পুরোপুরি করা হয়নি। এতকিছুর পরও প্রধান শিক্ষক ঠিকাদারের সব কাজ বুঝিয়ে পেয়েছে বলে স্বাক্ষর করেছেন। এতে সহজেই বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এই স্কুলের সংস্কারের কাজে অনিয়মের তথ্য জানতে পেরে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান শনিবার ঐ স্কুলে যান। সংসদ সদস্যের যাবার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সেখানে হাজির হন। আসাদুজ্জামান ঐ স্কুল ঘুরে দেখেন এবং সংস্কার কাজের মান দেখেন। বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অনিয়ম দেখে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।  

সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা আছেন তারা যদি এই কাজগুলো ঠিকভাবে বুঝে না নেন তবে আমি তো মনে করি ঠিকাদারের সাথে তাদের যোগসাজশ আছে। অথবা না বুঝেই করেছেন। এটার দায় দায়িত্বও তাদেরই নিতে হবে। যারা কাজ করেছেন তাদের ডাকা হবে। এটি নিয়ে সমস্যার সমাধান হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যে চিন্তা নিয়ে দেশটিকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যদি এভাবে কাজ হয় তবে দেশ গড়ে তোলার পরিবর্তে আমরাই এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছি। এখানে এলাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এরাতো শিক্ষক সমাজ, আমাদের মাথার তাজ। তাদেরতো জোর করে কিছু কথা বলাও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের জন্য অপরাধ। আমি মনে করি আমাদের দেখেই ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে।

এমপি বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি। এগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব আমার আছে। একটি প্রতিষ্ঠান দেখলেই তো বোঝা যায়। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতো এগুলো নিয়ে সচেতন হবে। বিদ্যালয় ভবনগুলো চকচকে থাকবে শিক্ষার্থীদের মন ভালো হবে। এই অনিয়ম আমার দেখেছি। এগুলো ঠিক করতে বলেছি। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। এটি মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  

এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহিদুজ্জামান বলেন, কাজ তো আমি করিনি। কাজতো সরকারের মাধ্যমে প্রজেক্টের কাজ। জাস্ট আমরা স্কুলে চাকরি করি, দেখেছি আমরা। ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন আমি সেভাবে বুঝিয়ে নিয়েছি। আমি তো আর কাজের কিছু বুঝি না। বরাবরই রঙের বিষয়ে অভিযোগ করেছি। অথচ খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজেই একজন লাইসেন্সধারী ঠিকাদার।

এ বিষয়ে জানতে মোহনপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোসা. নুরনাহারকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মোহনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা বলেন, এমপি স্যার একটি অভিযোগ নিয়ে স্কুলে গেছিলেন। আমরাও দেখেছি। এটি ইউএনও স্যার তদন্ত করে দেখবেন। তিনি এখন ছুটিতে আছেন। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ইমন বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মাফিক কাজ করেছি। তারপরও যদি অভিযোগ থাকে ইঞ্জিনিয়ার আছে। তিনি যাবেন কোন কাজের সমস্যা হলে আবারও কাজ করে দেওয়া হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  স্কুল সংস্কারে অনিয়ম-দুর্নীতি   এমপি-আসাদুজ্জামান আসাদ   মোহনপুর-রাজশাহী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close