ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

নদীতে চলে মোস্তফার বানানো ‘বিমান’
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪, ২:২৭ এএম  (ভিজিট : ৩২৮)
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি গোলাম মোস্তফার প্রকৌশল শাস্ত্রে একাডেমিক কোনো জ্ঞান নেই। সেই তিনিই কি না তৈরি করলেন পানিতে চলা অভিনব ‘বিমান’! অদ্ভুতদর্শন এই যান তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। দুই বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করে তিনি তৈরি করেছেন অভিনব এই বাহন যা দেখতে অনেকটা বিমানের মতো। দূর থেকে দেখে বিমান মনে হলেও এটি আসলে অবসর সময় কাটানোর নৌযান। এর নাম তিনি দিয়েছেন সুবর্ণা এক্সপ্রেস-২।

লোহা-লক্করের সঙ্গে গোলাম মোস্তফার বন্ধুত্ব প্রায় ২৭ বছরের। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে যতটুকু শিখেছেন তা দিয়েই বাজিমাত করেছেন তিনি। অজপাড়াগাঁয়ের এই মিস্ত্রি গতানুগতিক কাজে যখন হাঁপিয়ে ওঠেন তখন নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরিতে মগ্ন হন। কখনো চাষিদের জন্য, কখনো বা মৎস্যজীবীদের জন্য, কখনো সাধারণ মানুষের জন্য, আবার কখনো নিছক আনন্দের জন্য উদ্ভাবনে মেতে ওঠেন তিনি। ইঞ্জিনের দক্ষ মেকানিককে ফিটার বলা হয়ে ধাকে। এ কারণে নিজ এলাকায় গোলাম মোস্তফার চেয়ে মোস্তফা ফিটার নামেই বেশি পরিচিত তিনি।

গোলাম মোস্তফা জানান, তারা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। ইচ্ছে থাকলেও বিমানে ওঠার সাধ্য নেই। কারণ বিমানে ঘুরে বেড়াতে অনেক খরচাপাতি লাগে। কিন্তু এত টাকা তার নেই। তাই নিজেই একটি বিমান তৈরির পরিকল্পনা করেন। বছর দুয়েক আগে প্রথম তার মাথায় চিন্তাটা আসে। কিন্তু আকাশে উড়তে সক্ষম বিমান তৈরি করা তার সাধ্যের বাইরে। তাই পানিতে চলবে এমন বিমান তৈরির পরিকল্পনা করেন। নিজের পাশাপাশি তার মতো যাদের বিমানে ওঠার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য নদীর প্লেন তৈরিতে মনোনিবেশ করেন তিনি। দুই বছর ধরে তিলে তিলে তিনি তার পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন ঘটান। এটি তৈরিতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি মনে করেন, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি মানুষের জন্য উপকারি আরও অনেক টেকসই যানবাহন তৈরি করতে পারবেন।

গোলাম মোস্তফা আরও জানান, একটা সময়ে অন্যের ওয়ার্কশপে কাজ করতেন তিনি। এখন নিজের ওয়ার্কশপ আছে চৌমুহনী বাজারে। কাজের অবসরে লোহা-লক্কর দিয়ে নিজের মনমতো আবিষ্কারে মেতে ওঠেন। কৃষকের জন্য মজবুত লাঙ্গলের সংকট নিরসনে অতীতে স্টিলের লাঙ্গল বানিয়েছেন। কাঠের লাঙ্গলের মতো বছর বছর পাল্টাতে হয় না দীর্ঘস্থায়ী এই স্টিলের লাঙ্গল। এ ছাড়া লাঙ্গলের ফলার ধার বেশি হওয়ায় গভীরভাবে জমি চাষ করা সম্ভব হয়। কাঠের নৌকা সাধারণত কয়েক বছরের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে তিনি এমন নৌকা তৈরি করেছেন যার বডি লোহার। এ ছাড়া ভাসমান ট্রাক্টরও তৈরি করেছেন মোস্তফা। নিচু জমিতে পানি বেশি থাকায় সাধারণ ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা সম্ভব হয় না। এই সমস্যা নিরসনে ভাসমান ট্রাক্টর বানিয়েছেন তিনি।

মোস্তফার নদীর প্লেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা ১৮ জন। যাত্রীদের জন্য চেয়ার ছাড়াও আছে ফ্যান, লাইট ও জানালা। ইঞ্জিনচালিত এই বাহনটি এখন পর্যন্ত নিজেই পরিচালনা করছেন তিনি। এলাকায় চালানোর পাশাপাশি তিনি নদীপথে এ বিমান চালিয়ে বিশারকান্দি থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরের বানারীপাড়া পৌর শহরে এসেছেন। চলার সময় অভিনব বিমানটি দেখতে নদীর দুই তীরে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়।

এ প্রসঙ্গে বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত বলেন, মরিচবুনিয়ার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা নদীর প্লেন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার অদ্ভুতদর্শন এই যান এলাকায় ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ভেতর অন্যরকম উদ্ভাবনী শক্তি আছে। তাকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিলে আরও অনেক বেশি চমকপ্রদ কিছু তৈরি করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত আরও বলেন, অনেকেই নদীর এই প্লেন দেখতে আসেন। এতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেও আসেন অনেকে। মোস্তফা গ্রামের ছেলে হলেও তার মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি আছে। তিনি এর আগে আরও কয়েকটি জিনিস উদ্ভাবন করেছেন যা মানুষের অনেক উপকারে এসেছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close