ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ডিম সিন্ডিকেট এসএমএসের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে
এক লাখ ডিমে এক লাখ টাকা লাভ, জুয়াতেও এত লাভ নাই : ভোক্তা ডিজি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪, ৯:৩৩ পিএম  (ভিজিট : ৩৫০)
ডিম সিন্ডিকেট মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবেই যদি এসএমএসর মাধ্যমে যদি ডিমের দাম ঠিক করা হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ডিমের উচ্চ মূল্য নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, খামার, এজেন্ট, ডিলার ও ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে সরাসরি দায়ী করে সংস্থাটির মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কারা কীভাবে এসএমএস করে ডিমের দাম ঠিক করছে, সেই তথ্য তার কাছে আছে। এই সমিতি ভেঙ্গে দিলে ডিমের বাজার ঠিক হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ডিম ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এত লাভ জুয়াতেও (গ্যাম্বলিং) নেই।

গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে ডিমের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে প্রতিটি ১৫ টাকায় দাঁড়ায়। ঢাকার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। এমন প্রেক্ষাপটে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিদফতর।

সভায় অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়ানোর হোতা হিসেবে উল্লেখ করে এর জবাব চান। তিনি ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সংগঠনটির একটি সভার ছবি দেখিয়ে এভাবে সভা করে দাম নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার কে দিয়েছে, প্রশ্ন রাখেন।

এসময় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ বলেন, “জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে এরকম একটি সভা করার কথা বলেছিল, এজন্য আমরা ওই সভা করেছি। আমাদের এনএসআই বলেছে, এজন্য আমরা এই সভা করেছি।”

মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, এসএমএস কারা করে, কীভাবে করে, সব তথ্য আমার কাছে আছে। এই সমিতি ভেঙে দিলে বাংলাদেশে ডিমের বাজার ঠিক হয়ে যাবে। আমরা বগুড়ায় গিয়ে দেখেছি, কার নম্বর থেকে, কীভাবে এই এসএমএস আসে। পরে তিনি সংগঠনের তিন শীর্ষ নেতাকে সভার পর তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন।

ডিমের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে যে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির হাত রয়েছে, সেই তথ্য এক সপ্তাহ আগেই দিয়েছিলেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।

এই সমিতির হাতেই ‘ডিমের বাজারের নিয়ন্ত্রণ’ মন্তব্য করে সুমন বলেন, বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীদের তারা শুধু জানিয়ে দেয় আজ এত টাকা, কাল এত টাকা। এখানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা দিনে ও রাতে বাজার বসায়। দিনের বাজার ঠিক আছে। ঘোষণা অনুযায়ী ডিম বেচাকেনা হয়। কিন্তু রাতের বাজারে খামারির কাছ থেকে আনা ডিমের দাম তারা বসিয়ে দেয়।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কাছ থেকে ডিমের দামের এসএমএস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একজন খামারিও। নুরুল ইসলাম নামের ওই খামারির ভাষ্য, তেজগাঁও ডিম সমিতি থেকে প্রতিদিন মোবাইলে মেসেজ আসে যে আজ এত টাকা করে ডিমের দাম। আজ বাড়ছে বা কমছে। সেই মেসেজ অনুযায়ী সরবরাহকারীরা আমদের ডিম কেনে। মানে তারাই মেসেজ দেয়, তারাই কেনে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে তেজগাঁও ডিম সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, আমরা কখনও ডিমের দাম নির্ধারণ করি না। এই দাম ক্রেতারা নির্ধারণ করে। কেনাবেচার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

মঙ্গলবারের সভায় ভোক্তার মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, অভিযোগ এসেছে ফিডের দাম বেশি। মুরগির ফিড পার কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। সমস্যাটা হল, বাচ্চার দাম করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে হারে নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তার থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সাথে উনারা একটা প্যাকেজ দিচ্ছেন যে, বাচ্চা কিনলে ৬ মাস পর্যন্ত ফিডও তাদের থেকে কিনতে হবে। এটা বাধ্য করার কথা না। এই জায়গাটায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু, সবকিছু বিবেচনায় নিলেও অ্যানালাইসিস করে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৮ পয়সা। তাহলে ডিম ১৫ টাকা করে কেন বিক্রি হবে? এটা সম্পূর্ণ বিপণনের সমস্যা। আমাদের অভিযানে উঠে এসেছে, ডিমের দাম বেড়েছে বাজারে ট্রাকে বসে।

ডিমের দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আমরা অভিযান চালাতে কাপ্তান বাজারে গিয়ে দেখলাম, ডিমের মূল্য তালিকা ১১ টাকা, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমরা দেখলাম, বিক্রির কার্বন কপি তারা ব্যবহার করে না। অর্থাৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেমন জালিয়াতি হচ্ছে, তেমনি বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও জালিয়াতি হচ্ছে৷ এরপর কারওয়ান বাজারে এসে দেখলাম, রাতের আঁধারে একই ডিম তিনবার হাত বদল হচ্ছে। ডিম ভ্যানেই আছে, কিন্তু তিনবার কাগজ পরিবর্তন হয়েছে। শেষমেশ যিনি নিলেন, তিনি বেশি দামে বিক্রি করেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করে। অপরদিকে খামারিরা জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে ভোক্তা কম মূল্যে ডিম পাবেন।

বিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে চার হাত বদল হয়। ডিম উৎপাদনে খামারিদের বিনিয়োগ দীর্ঘ সময়ের। পক্ষান্তরে অন্যান্য ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ স্বল্প সময়ের। এ খাতের সকলে সমন্বিত হয়ে কাজ করলে শৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান (বাণিজ্য নীতি) মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত আছেন অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা জেলা কার্যালয় ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরমান হায়দার, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপপরিচালক শরিফুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সহকারী পরিচালক নুর উদ্দিন যোবায়ের, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close