ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দেশে পরবর্তী তাপপ্রবাহ আসবে ২০৩৪ সালে : গবেষণা
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব-ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও কৃষি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪, ৮:৫৪ পিএম  (ভিজিট : ৩৫৬)
চলতি বছর দেশের ইতিহাসে গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দশ বছর পর অর্থাৎ আগামি ২০৩৪ সালে এরকম হিটওয়েভ বা তীব্র তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে কৃষিক্ষেত্রে এবং পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। একইসঙ্গে ডিপ্রেশন, মাথা ব্যাথা, পানিশূন্যতাসহ জনস্বাস্থ্য নানা ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

‘দ্য ইমপ্যাক্ট অফ হিটওয়েভস ইন বাংলাদেশ: হিস্টোরিক্যাল ট্রেন্ডস, প্রেজেন্ট চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ফিউচার প্রোজেকশন্স’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমনটা উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো)’।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির ‘উইমেন’স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ)’ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এসময় জানানো হয়, বাংলাদেশে তিন দিনের বা তার বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিক গরম (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) আবহাওয়াকে হিটওয়েভ বা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে সঙ্গায়িত করা হয়। দেশে ১৯৯৪, ২০০৪ এবং ২০২৪ সালে পর্যায়ক্রমে এমন চরম তাপপ্রাবাহ দেখা গেছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হিটওয়েভ আঘাত না আসলেও বেশ কয়েকটি ঘটনা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। এই ধরনের তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা প্রায় প্রতি দশকে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, অনুমান করা যায় যে, ২০৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটবে।

গবেষাণাটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ এবং এর প্রবণতা নির্ণয়ের জন্য পূর্বের তাপমাত্রার তথ্য মূল্যায়ন করা। তাপপ্রবাহের বর্তমান প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করা। জনস্বাস্থ্য, কৃষিক্ষেত্রে এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে সৃষ্ট সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মূল্যায়ন করা। তাপপ্রবাহের ভবিষ্যত প্রবণতা সম্পর্কে পূর্বাভাস তৈরি করা।

এসময় জানানো হয় গবেষণার জন্য ১৯৭২ সাল থেকে তাপপ্রবাহের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সময় তাপামাত্রা প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে (তীব্র তাপপ্রবাহ) এই বছর ১৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০২৩ সালে তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। অনুমান অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, কার্বন নির্গমন ও এল-নিনোর প্রভাব। উষ্ণমন্ডলীয় জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রা অনুভূত হয়। গ্রীনহাউস গ্যাসের ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানী ও অন্যান্য জায়গার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই গড় তাপমাত্রা আরও শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়ে যাবে।

স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: গবেষণার জন্য চলতি এপ্রিল মাসে লালমাটিয়া ও মোহাম্মাদপুর এলাকার শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে ঢাকার ৮০ শতাংশ শ্রমজীবী যারা ফল এবং সবজি বিক্রি করে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন। এরমধ্যে ডিপ্রেশন, মাথা ব্যাথা, পানিশূন্যতা উল্লেযোগ্য। এই সমস্যাগুলো তাদের আগের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর উপর প্রভাব ফেলে, অ্যাজমা এবং ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তীতে আরো অসুবিধা তৈরি করে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, তাপপ্রবাহের দুই দিন পর কলেরার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তাপপ্রবাহের ফলে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব বাড়ে, যা ডায়রিয়া রোগসৃষ্টির প্রধান কারণ। হিটওয়েভ মশা দ্বারা সংঘটিত রোগের প্রভাব বাড়ায়। অনুমান অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৩০-এর দশকে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং ২০৫০-এর দশকে ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

পরিবেশে এবং আর্থ-সামাজিক প্রভাব: গবেষণায় আরও দেখা গেছে তাপপ্রবাহ বাংলাদেশের প্রতিবেশ, কৃষিক্ষেত্র এবং শহরাঞ্চলের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এছাড়া কৃষিজমির উপর অতিরিক্ত চাপ, বন উজাড় এবং শহরাঞ্চলে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এটা ফসলের উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলে, পানির প্রাপ্যতা কমে যায় যা অর্থনৈতিক ক্ষতিতে ভূমিকা রাখে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ২০২১ সালের তাপপ্রবাহে ২১০০০ হেক্টরের বেশি জমির ধান নষ্ট হয়েছে।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসডোর চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন যদি তাপপ্রবাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো সম্ভব এবং এই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে চরম তাপপ্রবাহ চলছে, যার তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ৪০ক্ক সে ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close