ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বন্যাকবলিতদের অনেকেই ভেঙে পড়েছেন শারীরিক মানসিকভাবে
প্রকাশ: রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪, ২:৩২ এএম  (ভিজিট : ৩৪৬)
উপর্যুপরি বন্যার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে সিলেটে গ্রামের পর গ্রাম। দুই দফার বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বাড়িঘরে ফিরছেন। দীর্ঘদিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজন বাড়ি ফিরেও নেই স্বস্তিতে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর এমন মানসিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ফের সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দুদফা বন্যায় সিলেটের ১০টি উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ২৩টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর তলিয়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করতে হয়। অনেক স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কাঁচা ও আধা পাকা বাড়িঘর। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাসাবাড়িতে ফিরছেন বন্যাকবলিতরা। স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নির্বাক অনেকেই। অনেকেই বলছেন, প্রতিবছর বন্যা তাদের জন্য অভিশাপ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের মাধ্যমে মাথাগোঁজার ঠাঁই করতে দিনরাত সমানতালে কাজ করছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। 

সিলেটের সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছকিনা বেগম জানান, বছর বছর বন্যা আমাদের জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নতুন করে যখন ঘুরে দাঁড়াই, তখনই আবারও বন্যা হানা দেয়। আমরা মরতে মরতে বেঁচে আছি। রোগেশোকে দিন কাটছে আমাদের। 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়াগাঙ্গেরপার গ্রামের আনোয়ারা বলেন, বন্যার এত এত তাণ্ডব আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ২০২২ সালের পর ২০২৪ সালেও বন্যায় বাড়িঘর ভেসে গেছে। বন্যার কারণে কখনো অন্যের  বাড়িতে, আবার কখনো আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে বিভিন্ন চুলকানি যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছি আমরা। 

কোম্পানীগঞ্জের পুটামারা গ্রামের হাফসা বিবি বলেন, বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়েছে। নাতিনাতনি জ¦রসহ বিভিন্ন রোগে পড়েছে। ছেলেরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বন্যার এ ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব, সে চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। 

এদিকে সর্বস্ব হারানো বন্যাকবলিতরা মানসিক ও শারীরিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের মুখোমুখি হতে পারেন-এমন আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পানিবন্দি জীবনযাপনের প্রভাবে এমনটা হতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বন্যাকবলিতদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল সময়ের আলোকে বলেন, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি বন্যার সময়। নিজ উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ত্রাণ ও মেডিকেল ক্যাম্প করছি। বন্যা আক্রান্তরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। পাশাপাশি তারা মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে বন্যার্তদের রক্ষা করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদি সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বন্যার্তদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। বন্যার্তরা সব হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় সর্দিজ¦রসহ ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা নিয়ে দূরের পথে ডাক্তারের কাছে যাবে না। ফলে সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আগেই বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দুর্গম এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করা দরকার। আমি নিজের অবস্থান থেকে ইতিমধ্যে দুটি মেডিকেল ক্যাম্প করেছি। সামনে আরও করব। 

এদিকে চলতি সপ্তাহেও স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উজানের অতিবৃষ্টি ফের বন্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সিলেটের সব নদনদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, সিলেটের সব নদনদীর পানি স্থিতিশীল আছে। শুধু কুশিয়ারা নদীর পানি একটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারার পানি মৌলভীবাজারের মনু নদী হয়ে নামে। এ কারণে পানি কমছে ধীরে ধীরে। তিনি জানান, পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিলেট অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত ২৯ মে থেকে সিলেটের ১০ উপজেলা পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত হয়। ২ জুন থেকে প্লাবিত হতে থাকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ড। পরে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করলে অতিবৃষ্টির প্রভাবে ১৫ জুন থেকে সিলেট জেলার ১০ উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় দফা বন্যা আঘাত হানে। দুই দফা বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভাসিয়ে নেয়। এ সময় ৮ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করতে থাকেন। পরে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close