ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক
নির্বিচারে মারা হচ্ছে সাপ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪, ২:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৪০৪)
দেশজুড়ে রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্কের মধ্যে ঢাকার ধামরাইয়ে মারা পড়ছে অন্য প্রজাতির নিরীহ নির্বিষ সাপ। এই উপজেলায় মাত্র ১০ দিনে অর্ধশতাধিক সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিটিয়ে মারা সাপের বেশিরভাগই নির্বিষ। আর ধামরাইয়ে রাসেলস ভাইপার দেখা যাওয়ার তথ্যও সত্য নয়, স্রেফ গুজব। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সাপ রক্ষায় সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। 

ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালিব আল মোমিন বলেন, সাপ নিধন বন্ধে বন বিভাগ যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। ইউএনওসহ উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে সাপ নিধন বন্ধের জন্য। যেসব সাপ মারা হচ্ছে তার বেশিরভাগই বিষধর নয়। এমনকি ঢোঁড়া সাপও পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারে সাপ মারার কারণে পরিবেশে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। ধামরাই-আশুলিয়ায় রাসেলস ভাইপার দেখা যায়নি। যদি দেখাও যায় তা হলে আমাদের যে বন্য প্রাণী রেসকিউ দল রয়েছে তাদের হটলাইনে খবর দিলে তারা গিয়ে সাপ উদ্ধার করবে। মানুষ যাতে সাপের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয় এ বিষয়ে তাদের সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। 

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. আবদুল্লা আল মামুন বলেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনও কাজ করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, সব সাপেরই প্রকৃতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রায় সব সাপেরই প্রধান খাবার ইঁদুর। ফলে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে সাপের ভূমিকা রয়েছে। আর রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। কিন্তু যেমন প্রচার হচ্ছে তেমন নয়। সাপ আগেও ছিল। এখনও আছে। এভাবে সাপ নিধন ঠিক নয়। সাপ রক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। যেকোনো প্রাণী মেরে ফেলাই বেআইনি। আইনের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড থেকে মানুষকে সরে আসতে হবে। রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে প্রতিনিয়ত গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসব ভুল তথ্য থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজ ধামরাইয়ের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, প্রতিটি প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে জেনে না জেনে নির্বিচারে সাপ পিটিয়ে মারা হলে সেটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে। ফলে যারা বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি খবরে দাবি করা হয়, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা গ্রামে স্থানীয়রা একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছে। খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সরেজমিন জালসা গ্রামে গেলে কে বা কারা ওই সাপ মেরেছে সেই বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। জালসা গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন বলেন, জালসা গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় সাপটি মারা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সেটি রাসেলস ভাইপার নয়। এই তথ্যটি গুজব। 

এ ছাড়া ফেসবুকে খবর ছড়ায়, ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামে রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু গোয়ালদী গ্রামে গিয়েও এই খবরের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানার জন্য সোমভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোয়ালদী গ্রামে রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ গুজব।

এদিকে এসব খবরের মধ্যেই গত ২০ জুন উপজেলার আমতা ইউনিয়নের কাঁচা রাজাপুর গ্রামে তহিরন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা সাপের দংশনে মারা যান। খবর ছড়ায়, ওই বৃদ্ধা নাকি রাসেলস ভাইপার সাপের দংশনে মারা গেছেন। কিন্তু ভিন্ন কথা জানালেন আমতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন। তার কথায়, নিজ বাড়িতে কাজ করার সময় তহিরন নেছাকে সাপ দংশন করে। তবে কোন সাপ তাকে দংশন করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত ২৩ জুন সানোড়া ইউনিয়নের সানোড়া খালপাড় এলাকায় মা সাপসহ আরও ২৩টি সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মা সাপটি ছিল নির্বিষ দাঁড়াশ সাপ। রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে সেটি পিটিয়ে মেরে ফেলে এলাকার লোকজন। একইভাবে ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরিফবাগ এলাকায় রাসেলস ভাইপার গুজবে পিটিয়ে মারা হয় নির্বিষ একটি মা দাঁড়াশ সাপসহ মোট ২৯টি সাপ। 

উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায়ও রাসেলস ভাইপার সাপের গুজব ছড়িয়ে অন্য প্রজাতির সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড লাকুড়িয়াপাড়া এলাকায় মারা হয়েছে একটি গোখরা সাপ।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close