ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অভিযানেও বন্ধ হয়নি তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪, ২:৪১ এএম  (ভিজিট : ৩৫০)
নওগাঁ পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা দফায় দফায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়েছেন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজন ইটভাটার মালিককে করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা জরিমানা। এমনকি একাধিক ইটভাটা গুঁড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও নওগাঁর মান্দায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে।

মান্দা উপজেলার তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই জোরেশোরে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার জোরে তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ইটভাটার নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। 

এ বিষয়ে নওগাঁ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া বলেন, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আনজুমান বানু বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। সত্যিই যদি ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হয় তা হলে কোনোভাবেই অনুমোদন দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে এসইপি ব্রিকস ইটভাটার মালিক আবদুল খালেক বলেন, কাঁশোপাড়া এলাকায় আমার একটি ইটভাটা ছিল। সেই ইটভাটাটি তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটা চালু করা হবে। 

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় তিন ফসলি জমিতে এসইপি ব্রিকস নামে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। এর চারপাশেও রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। নিমার্ণাধীন ইটভাটা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই জনবসতি। ইটভাটা চালু হলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আশপাশের জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে নির্মাণ শ্রমিকরা ইটভাটার চিমনি নির্মাণের কাজ করছেন। তারা জানান, ইটভাটার মালিক আবদুল খালেক। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৩ অনুযায়ী ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা মানা হয়নি। পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি সনদ ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটাটি। কৃষিজমিতে ইটভাটা হলে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, নিয়মনীতি না মেনে ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চললেও দেখার যেন কেউ নেই।   

স্থানীয়রা জানান, শিবনগর এলাকার ফসলি মাঠের প্রায় সব জমিই তিন ফসলি। এক মাস খানেক আগে ফসলি জমির মাঠে ইটভাটা নির্মাণের জন্য নির্মাণসামগ্রী ফেলা শুরু করেন উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক। এখন ইটভাটাটির চিমনি নির্মাণের কাজ চলছে। প্রশাসনের অনুমতি না পেলেও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক ইটভাটা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তালপাতিলা গ্রামের কৃষক সলোমান হোসেন বলেন, যে মাঠে ইটভাটাটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেই মাঠের অধিকাংশ জমিই তিন ফসলি। ইটভাটাটি চালু হলে আশপাশের জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ ব্যাহত হবে। যেখানে ভাটা হচ্ছে সেখান থেকে কিছু দূরেই আমার চার বিঘা ফসলি জমি আছে।

উপজেলার চকউলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াকুব আলী মণ্ডল বলেন, একটি জমিতে চাইলেই যা খুশি তাই করা যায় না। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরেও ওই এলাকায় তিন ফসলি উর্বর জমিতে কীভাবে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে? বিষয়টি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষকরা সবাই এই ভাটা নিয়ে ক্ষিপ্ত। কিন্তু ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তিন ফসলি জমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করতে দেওয়া উচিত নয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close