ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

জৌলুস নেই শতবর্ষী ছাগলের হাটে
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ৬:৪৫ পিএম  (ভিজিট : ৩৭২)
কুরবানির ঈদ সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারও মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদিতে বসেছে শতবর্ষী ছাগলের হাট। গরুর হাটের মতো ছাগলের হাট নিয়েও স্বস্তিতে নেই এখানকার প্রান্তিক খামারিরা। বিপুল পরিমাণ ছাগল ও ভেড়া উঠলেও বিপরীতে সাধারণ ক্রেতা এবং বাইরের ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। হাটে ছাগল তুলে শেষ সময়েও দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। 

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হারিছুল আবিদ বলেন, মেহেরপুর জেলায় কুরবানিযোগ্য ছাগলের চাহিদা ৫০ হাজারের কিছু বেশি। তবে জেলায় কুরবানি উপযোগী ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি। উদ্বৃত্ত ছাগলগুলো বাইরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা যা বেপারিদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। 

হাটের ইজারাদার ইসরাফিল বলেন, এখানে প্রতি হাটে ৪ থেকে ৫ হাজার ছাগল আমদানি হয়। এবার ঈদের আগমুহূর্তে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার ছাগল আমদানি হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই হাটের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। সারা বছর হাট বসলেও কুরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রচুর ছাগলের আমদানি হয়। এটিই বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাগলের হাট। এখানে সপ্তাহের শনি ও বুধবার ছাগলের হাট বসে। বছরজুড়েই ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম থাকে হাটটিতে। হাটে আনা ছাগল যেন অসুস্থ না হয় এবং কেউ যেন অসুস্থ ছাগল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে জাল টাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন।

মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। মেহেরপুরের পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা জেলা এই ব্ল্যাক বেঙ্গলকে ব্র্যান্ডিং করেছে। দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংস, মাংসের ঘনত্ব ও উন্নতমানের চামড়ার জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ^খ্যাত। দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মেহেরপুরের বারাদিতে ছাগলের এই হাট থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কিনে নিয়ে যান। 

সরেজমিন দেখা যায়, এবার হাটে উঠেছে রাম ও যমুনাপাড়ি জাতের বড় বড় ছাগল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন এই হাটে। কালো ও লালচে রঙের ছাগলের চাহিদা বেশি। জাত ভেদে ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা মূল্যের ছাগলও উঠেছে হাটে। তবে মাঝারি ধরনের ছাগলের ক্রেতাই বেশি। বড় ও দৃষ্টিনন্দন ছাগল হাটে এনে বিপাকে পড়েছেন অনেক বিক্রেতা। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে আসছেন কুরবানির ছাগল কিনতে। তবে দাম নাগালের বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক ক্রেতা। হাটে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক বেঙ্গল, বিদেশি জাতের ছাগল ও ভেড়া এবং গাড়ল বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম হওয়ায় লোকসানেই ছাগল বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানালেন প্রান্তিক খামারি ও স্থানীয় বেপারিরা।

রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকজন বেপারি কেনাকাটা করলেও অবিক্রীত রয়ে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক ছাগল ও ভেড়া। ছাগলের পাশাপাশি হাটে ভেড়াও পাওয়া যায়। দেখা যায়, অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভেড়া। কিন্তু গলায় কোনো রশি নেই। ভেড়ার মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, বড় ভেড়াটিকে ধরে রাখলেই চলে। একে ঘিরে থাকে অন্য ভেড়ারা। ভেড়ারা রশিতে বাঁধা ভেড়াকে ঘিরে অবস্থান করে সব সময়। এটা ভেড়ার সহজাত ধর্ম।

ঢাকা থেকে আসা ছাগল ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বলেন, কুরবানির সময় এ অঞ্চলের হাটে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়। আমরাও এখানে আসি ছাগল কিনতে। এখানে সারা বছরই ছাগল পাওয়া যায়। তবে ঈদের আগে ভালো মানের ছাগলের সরবরাহ বেশি থাকে।

সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের স্থানীয় ছাগল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরসহ আশপাশ এলাকার সবচেয়ে বড় ছাগলের হাট বারাদি হাট। কুরবানি ঈদ সামনে রেখে প্রচুর সংখ্যক ছাগল আমদানি হয় এই হাটে। আমরা গ্রাম এলাকা থেকে ছাগল কিনে এই হাটে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। অনেকে কুরবানির জন্যও কিনে নিয়ে যান। ঈদের সময় একটু বাড়তি আয়ের জন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে জোর দিয়ে ব্যবসা করি। এ বছর অন্যবারের মতো ব্যবসা হচ্ছে না। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। দেখা যাক, কুরবানির আগমুহূর্তে কী হয়!

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close